চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার জামাল খানের একটি আবাসিক ভবনের পার্কিং থেকে এস আলম গ্রুপের একটি গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১০টার দিকে 'সানমার বিল্ডিং' নামের একটি ভবন থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়।

জব্দ হওয়া গাড়িটির গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর চট্ট-মেট্রো-ঘ-১১-৫৩৪৪। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, গাড়িটি এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী লজিস্টিকসের নামে নিবন্ধিত। 

এটির রেজিস্ট্রেশনের সময় ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নগরের আসাদগঞ্জ এলাকার এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ভবনের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ভবন থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটিতে থাকেন বিএনপি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার সভাপতি মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। যদিও এস আলমের গাড়িটি কীভাবে তার ভবনের পার্কিংয়ে রাখা হয়েছে- সেটি তিনি নিশ্চিত নন। 

এ বিষয়ে মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী বলেন, এস আলমের গাড়ি কে রেখেছে আমি জানি না। আমিও অন্য সবার মতো এই ভবনে থাকি।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই ভবনে এস আলমের আরও দুটি গাড়ি ছিল। অভিযানের বিষয়ে আঁচ করতে পেরে সেগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) লিয়াক আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এস আলমের মালিকানাধীন একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এস আলমের সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আপাতত গাড়িটি থানায় রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ২৯ আগস্ট এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের ব্যবহৃত ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার অভিযোগ উঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুখে। এটি নিয়ে ভিডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে বিএনপি ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট এস আলমের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল গাড়িতে চড়তে দেখা গেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। মিতসুবিশির স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের জিপে করে ওইদিন তিনি কক্সবাজার থেকে চকরিয়া-পেকুয়ায় যান। বহর নিয়ে সালাউদ্দিনের যাত্রার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন।

গত ২৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‌গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসআলম গ্রুপের জ‌মি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দেন। 

এদিন তিনি জানান, এসআলম গ্রু‌প এবং তা‌দের স্বার্থসং‌শ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক-লেনদেন ও ঋণ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন প্রতিষ্ঠান‌টি নামে-বেনামে থাকা বি‌ভিন্ন জ‌মি ও সম্পদ বি‌ক্রি করার চেষ্টা করছে। এগুলো ঠেকাতে আইনি প্রক্রিয়া দরকার।

ড. মনসুর বলেন, এস আলম বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছেন। এভাবে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না জানা নেই। এখন এস আলমের নামে–বেনামে থাকা সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। তাই এই মুহূর্তে এস আলমের সম্পদ যেন কেউ না কেনেন।

এমআর/এমএসএ