বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা ১৩ সাবেক মন্ত্রী ও এমপির কেউই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হননি। এমনকি দুদকের কাছে সময় চেয়ে আবেদনও করেননি।  

তলবকৃতদের ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদান করার কথা ছিল।

যাদের তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে- সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলালকে গত ১ সেপ্টেম্বর হাজির হতে বলা হয়েছিল।

এছাড়া ২ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়- সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রাথমিক ও মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

এছাড়াও কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি সরওয়ার জাহান, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীন, ও রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি এনামুল হককে ৩ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়। 

গত ১৫ বছরে মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কারো আয় বেড়েছে, কারো বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০ গুন থেকে কয়েক হাজার গুন বেড়েছে সম্পদ। কারও ক্ষেত্রে সম্পদ ও আয় বেড়েছে লক্ষগুন পর্যন্ত।

এর মধ্যে কেবল সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী-৪ আসনের এমপি মো. এনামুল হকের পক্ষে একজন সময়ের আবেদন করলেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাখিল না করায় গ্রহণ করেননি দুদকের অনুসন্ধান টিম।

এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের জালে ধরা পড়ার আগেই কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। একজন আটক হয়েছেন তবে অধিকাংশরাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের তলব করা হলেও কেউই হাজির হয়ে বক্তব্য দেননি। আমাদের পক্ষ থেকে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের ঠিকানায় চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনে তারা হাজির না হলে, আইন অনুযায়ী ধরে নেওয়া হবে- তাদের বক্তব্য নেই।

দুদক উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম ওই ১৩ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে। ইতোমধ্যে সবার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ বছরে মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কারো আয় বেড়েছে, কারো বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০ গুন থেকে কয়েক হাজার গুন বেড়েছে সম্পদ। কারও ক্ষেত্রে সম্পদ ও আয় বেড়েছে লক্ষগুন পর্যন্ত। নির্বাচনী হলফনামার তথ্য নিয়ে টিআইবির করা এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ দুর্নীতি, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ লোপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগ যুক্ত হতে থাকে তাদের বিরুদ্ধে।

আরএম/এমএসএ