সড়কে বিশৃঙ্খলার ৮০ ভাগের জন্য দায়ী সরকার ও প্রশাসন বলে অভিযোগ করেছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা। চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ যাত্রীবান্ধব ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, পরিবহন সেক্টরে অনেক সমস্যা আছে। তবে সমস্যাটা বেশিরভাগই কাঠামোগত। ৮০ ভাগ সমস্যা সরকার ও প্রশাসনের জন্য হয়ে থাকে। এখানে বাস মালিকদের সমস্যা মাত্র ২০ ভাগ হতে পারে। এই সমস্যা সমাধান করতে হবে এবং এই সমস্যার পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে পরিমাণ গাড়ি রয়েছে সেই পরিমাণ ড্রাইভার নেই। এদেশে হেলপারদেরও কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয় না। এদেশে ফিটনেস নিয়ে একটা বড় ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে। কোথায় গাড়ি থামবে সেটা এখনো নির্ধারিত নয়।

গুণমান না থাকলেও ভারতীয় বাস বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে জানিয়ে রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, সরকারের নীতিমালার কারণে আমাদের ভারতীয় বাস কিনতে হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় বাসের কোয়ালিটি এত ভালো নয়। যেহেতু পলিসির কারণে দাম অনেক বেশি থাকে, তাই আমরা অন্য দেশ থেকে গাড়ি কিনতে পারি না। কারণ বেশি দামে গাড়ি কিনলে সেটা ভাড়ার ওপর ইম্প্যাক্ট করবে। সহজে গাড়ি কেনার পলিসি সরকারকে তৈরি করতে হবে। আমাদের সাবসিডি দরকার রয়েছে। সেটা সরকারি নির্ধারণ করবে কী পরিমাণ সাবসিডি আমরা পাব এই সেক্টরে।

তিনি বলেন, লাইসেন্স নিয়েও এক ধরনের ব্যবসা তৈরি হচ্ছে। তাই চালকরা লাইসেন্স নিতে এখন ভয় পায়। চালকের জন্য কোনো ট্রেনিং সেন্টার নেই। এটা সরকারকে অবশ্যই তৈরি করা উচিত। দরকার হলে সিমুলেশন সিস্টেম ডেভেলপ করে চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সমিতির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম বলেন, বাস প্রতি কমিউনিটি ট্রাফিকের নামে ১০ টাকা, টার্মিনাল ও অন্যান্য চার্জ ২০ টাকা। এছাড়া মালিক সমিতি নিতো ৩০ টাকা করে। আমার জানামতে এই টাকাটা বৈধভাবেই নেওয়া হতো। এর বাইরে কোনো টাকা চাঁদা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা চাই চাঁদামুক্ত একটি পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এই চাঁদাগুলো নেওয়া বন্ধ করেছি।

জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে ভাড়া সমন্বয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা সরকারের কোনো নিয়ম ভঙ্গ করব না। ভাড়া সমন্বয়ের জন্য আমরা একটি অটোমেটিক সিস্টেমের কথা ভাবছি। ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বা কমলে বারবার এটি নিয়ে মিটিং করতে হবে না। এছাড়া যাত্রীরা যেন দ্রুত গতিতে তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারে সেজন্য প্রতি টার্মিনালে একটি করে আলাদা বুথ রাখা হবে। যেখানে যাত্রীরা অভিযোগ করলে আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বিশৃঙ্খলা শুধু বাস মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, একই সড়কের যন্ত্র চালিত যানবাহন এবং অযন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচল সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে এতে দুর্ঘটনার প্রবণতা বহুল অংশে বাড়ে। এছাড়া অবৈধ যেসব যানবাহন রয়েছে সেগুলো সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া হাঁটার জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে ও বাস স্টপেজ নিশ্চিত করতে হবে।

মতবিনিময় সভা থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ৬টি কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে— ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃত্বে যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধ ও যাত্রীবান্ধব পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা; যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ সড়ক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের, শিশু ও প্রতিবন্ধী ও বয়োজ্যেষ্ঠ যাত্রীদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়া; সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য মালিক/শ্রমিক ও প্রশাসনের সহযোগিতায় চেষ্টা অব্যাহত রাখা; মালিক-শ্রমিক-পুলিশ প্রশাসন সর্বোপরি ছাত্র-জনতাকে সম্পৃক্ত করে যাত্রী জনকল্যাণমুখী নিরাপদ সড়ক গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সব টার্মিনালে চালক-শ্রমিকদের নিয়মিত কাউন্সেলিং/মোটিভেশন সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া; ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কমিউনিটি ট্রাফিক নিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন টার্মিনাল সম্মুখসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সব প্রকার চাঁদা সম্পূর্ণরূপে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এমএইচএন/পিএইচ