রুমা আক্তারের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। মায়ের চিকিৎসার জন্য সকাল সকাল এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না তাদের। ফলে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পেলেন না চিকিৎসাসেবা।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় রুমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য সকালে ঢামেকে এসেছি। কিন্তু এসে শুনি ডাক্তার নাই। ভাবলাম অপেক্ষা করি ডাক্তার হয়ত আসবে। কিন্তু বিকেল ৩টা বেজে গেলেও ডাক্তার আসেনি।

রুমা আক্তার বলেন, ভেতরের স্টাফরা পরে জানাল আজ আর ডাক্তার আসবেন না। তাহলে এই কথাটা তারা আগে কেন বলতে পারল না। সারাটা দিন অপেক্ষা করে তো আমার মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে, এর দায়ভার কে নেবে।

হবিগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে ঢামেকে এসেছিলেন ছয় মাসের গর্ভবতী সেলিনা হোসেন (ছদ্মনাম)। হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন তিনি। তাই দ্রুত স্বজনরা তাকে ঢামেকে নিয়ে আসেন। কিন্তু চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। একদিন অপেক্ষা করেও চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা।

সেলিনা হোসেনের স্বজনরা বলেন, শনিবার রাতে আমরা তাকে নিয়ে ঢামেকে আসি। ছয় মাসে গর্ভবতী হলেও হঠাৎ করে তার যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই, পরে হবিগঞ্জ থেকে ঢামেকে নিয়ে আসি। কিন্তু আমরা তো আর জানতাম না যে এত ঝামেলা হয়ে গেছে। রাত থেকে চিকিৎসা পাইনি। আজ দিনের প্রায় শেষ, কোনো চিকিৎসার খবর নেই। এদিকে রোগীর অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে, কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।

তারা আরও বলেন, এখন প্রাইভেট মেডিকেলে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। যদি সেখানেও চিকিৎসা না পাওয়া যায়, তাহলে কি করব জানি না।

এর আগে দুপুরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দোষীদের গ্রেপ্তার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন শনিবার থেকে ঢামেকে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আমাদের তিনজন চিকিৎসককে নিউরো সার্জারি বিভাগ থেকে মারতে মারতে প্রশাসনিক ব্লকের পরিচালকের রুমে নিয়ে আসা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বহিরাগতরা এসে হাসপাতালে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরপর ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে (ওসেক) এসে ভাঙচুর চালায়। এরকম ঘটনা যদি প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা সেবা দেব। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। যেখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই, সেখানে আমরা কীভাবে চিকিৎসা দেব।

গতকাল শনিবার নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টা পর তারা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।

মধ্যরাতে খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এসময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ।

পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা।

নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।

ওএফএ/এসএসএইচ