গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের সংস্কারের দাবি উঠেছে সর্বমহলে। সেই সংস্কারকে সাধুবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবার সেই সংস্কার কাজ শুরু করতে চায় তারা। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখবে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান।

‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পার্সনস ফ্রম ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ সনদে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সই করেছেন জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা মানবাধিকার কর্মীদের জন্য মাইলফলক। প্রায় সাতশয়ের উপর মানুষ গুমের কারণে নিখোঁজ হয়ে আছেন। আর যেন কেউ কখনো নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনো বাহিনীকে দিয়ে, কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে গুম করতে না পারে। তার জন্য এ কনভেশনে স্বাক্ষর করেছি। সরকার এ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করবেন।

মানবাধিকার নিয়ে শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুম বাংলাদেশে অহরহ ঘটেছিল, যেটা এ যাবতকালে অস্বীকার করা হয়েছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যারা গুমের শিকার হয়েছেন তারা একটা সুরক্ষা পাবেন। সরকারি পর্যায় থেকে ফ্যাসিবাদ কায়েম রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বিরুদ্ধমতকে দমন করার জন্য গুম করে ফেলা হতো। সেটাতেও একটা শক্ত বার্তা গেল যে, এসব আর হবে না। গুম তো করার কথা না। সেটা করেছেন (হাসিনা সরকার) বলে আমাকে অবস্থান নিতে হয়েছে। সরকারি বাহিনীর জন্য গুম করার লাইসেন্স নেই। তার আইনগত এখতিয়ার নেই। এটা বন্ধ থাকা উচিত ছিল।

যেসব বাহিনীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরের কাগজ জমা পড়ার পর থেকে কার্যকর হবে। আগের গুমের ঘটনা নিয়ে একটা কমিশন হয়েছে। সেখানে কার্যপরিধি বলে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কোথাও বাদ দেওয়া হয়নি।

কত মানুষ গুম হয়েছে এ তালিকা সরকার প্রকাশ করবে কি না এমন প্রশ্নে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কমিশনের কার্যপরিধি অনুযায়ী একটা তালিকা চূড়ান্তভাবে করতে হবে।

বন্য পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান পানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বন্যার কারণে রপ্তানিমুখী যেসব শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের যেন শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে, সেই জন্য সরকারের পক্ষে সহায়তার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

অর্থক্ষেত্রে সংস্কারের অংশ হিসেবে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিতে যা যা করণীয় সরকার তা শুরু করে দিয়েছে। আগে আমাদের একটি পদ্ধতি ছিল জিও-এনজিও সমন্বয়। সেটা পুনরুজ্জীবিত (রিভাইভ) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আমরা দায়িত্বগ্রহণের সময় থেকে একমাসের মধ্যে কোন কোন মন্ত্রণালয়, সরকার কি কি কাজ করেছে সেগুলোর ব্যাপারে একটা নোট করে আপনাদের (সাংবাদিক) দিয়ে দেব।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সুবিধাভোগী অনেক কর্মকর্তা নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে এই সরকারের সুযোগ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে— এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টা হচ্ছে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে তার ব্যাপারে আমরা আমাদের অবস্থান জানাচ্ছি। যে কোনো সরকারকে তার কাজ চালাতে গেলে ভালো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দরকার পড়ে। যদি আমরা দেখি কারও দক্ষতা আছে, তার ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদেরতো কাজটা নিয়ে আগাতে হবে। এখন যদি আগের সময়ের কেউ ভালো পদে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা যদি অন্য কাউকেই নেব এমন নীতিগত সিদ্ধান্তে চলে যাই, তাহলে কাজ আগাব কেমন করে? সেটা বড় প্রশ্ন। কারও ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটা জানাবে। এ রেজিম, সেই রেজিম, আগে রেজিম, পরে রেজিম বললে আমাদের সঙ্গে অন্যদের তফাৎটা কি? একটা তফাৎ আমাদের আনতে হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।

এনএম/এমএসএ