বেশ কিছুদিন ধরে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। 

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে নিজের নিরাপত্তা জনিত বিষয়ে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সোহেল তাজ বলেন, অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছাত্র-জনতা একটি পরিবর্তন এনেছে। শত-শত প্রাণের বিনিময়ে আজকের অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে৷ এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি৷  আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধশালী প্রগতিশীল বাংলাদেশ৷ আমাদের বংশধর, নাতি নাতনিসহ সবাই যেন একটি সুন্দর বাংলাদেশ পায়। সেই প্রয়াসেই তো এই আত্মত্যাগ, ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান৷

অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য কামনা করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সরকারের সাফল্য কামনা করছি৷ আমি মনে করি যে কোনো ভালো কাজ কিংবা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজের জন্য আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করা বড় একটি অংশ৷ সুশাসন পেতে হলে আইনের শাসন জরুরি৷ আমি ব্যক্তিগত একটি বিষয় নিয়ে এখানে এসেছি৷ আমাকে বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ আমার প্রাণের উপর হুমকি এসেছে৷

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি একজন কর্মঠ মানুষ৷ প্রতিদিন আমাকে কাজ করতে হয়৷ গতকাল আমি যখন কাজ শেষ আমার ডিওএইচএস-এর বাসায় ফেরত যাচ্ছিলাম তখন একটি মোটরসাইকেল চালক আমাকে ছায়ার মত ফলো করে৷ আমি যখন সেনানিবাস দিয়ে ঢুকে যাই তখন তিনি আমাকে থামতে বলেন৷ আমি দেখি তার শার্টের মধ্যে লাল-নীল লাইট জ্বলছে৷ তিনি আমাকে ইশারা করেছেন থামতে৷ আমি বুঝতে পারছিলাম না তিনি কে৷ সাধারণত ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে এমপিরা থামায়৷ আমাকে থামানোর পর আমি তাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করি আপনি কে? আপনার পরিচয় কি? আমাকে কেন থামতে বলেছেন? উনি বারবার আমাকে বলছেন আমাদের লোক আসবে৷ আপনার থামতে হবে৷ 

একপর্যায়ে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি  আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ৷ আপনি সোহেল তাজ৷ আমি তাকে বারবার তার পরিচয় জানতে চাইলাম৷ সে কোনো উত্তর দিলো না৷ এরপর তিনি আবার ফোনে কথা বলে আমাকে বললেন- আপনি চলে যেতে পারেন৷ আমি যেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি সে যে ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিল তারা অন্য স্থানে অবস্থান নিয়েছিল৷ তারা ভেবেছিল আমি হয়তো মহাখালি দিয়ে যাবো৷

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করছি এখানে একটি অঘটন ঘটাবার পরিকল্পনা ছিল৷ আমি আজকে এই বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করতে এসেছি৷ আমি মনে করি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার আছে৷ আমি তাকে বলেছি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অতি দ্রুত উন্নতি করেন৷ তিনি এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন৷

আমি বর্তমানে সাধারণ নাগরিক হলেও আমার একটি পরিচয় আছে৷ আমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সন্তান৷ সেই পরিচয়ের কারণে অনেক মহল থেকে অনেক কিছু করার প্রয়াস থাকতে পারে। আমি সাধারণভাবে চলার চেষ্টা করলেও এই পরিস্থিতিগুলো আমাকে ছাড়ছে না৷ আমার অধিকার আছে সাধারণ নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার৷

কারা ফলো করেছে বলে মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানিয়েছি৷ সেনাবাহিনী প্রধানের কাছেও জানাবো৷ আমি গতকাল রাত ১০টা ৫১ মিনিট থেকে ৫৬ মিনিটের মধ্যে সেখানে প্রবেশ করেছিলাম৷ সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে অনুরোধ করবো- আমি যে গেট দিয়ে ঢুকেছিলাম ওই গেটে হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা রয়েছে৷ আমার বিশ্বাস- আমাকে যে মোটরসাইকেল ফলো করেছিল তার লাইসেন্স বের করে পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব৷ 

আমার ভাগনেকে ১১ দিন আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল 

সাংবাদিকদের সোহেল তাজ বলেন, ২০১৯ সালে আমার এক ভাগনেকে অপহরণ করে আয়নাঘরে ১১ দিন রাখা হয়েছিল৷ আমি সে সময় গুম-খুন এর প্রতিবাদ করেছিলাম৷ অনেক কায়দা-কষ্ট করে সে সময় আমার ভাগনেকে উদ্ধার করে এনেছিলাম৷ আমি বারবার বলেছিলাম এরকম ঘটনা ঠিক না৷ এমন ঘটনা বাংলাদেশের যেন আর না হয়৷ আমি একজন সাধারণ নাগরিক৷ আমার অবস্থান থেকে আমি সবসময় প্রতিবাদ করে এসেছি৷  হত্যা, গুম এবং মানুষের অধিকার বিলুপ্ত করা আমি কখনোই সমর্থন করিনি৷ 

এমএম/এমএসএ