যখন রাজনৈতিক পালাবদল হয়, তখনই কিছু দুর্বৃত্ত, কিছু ডাকাত অন্যের সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ করে বলে মন্তব্য করেছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, এরা দখল ও লুট করে। এদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই। এরা দুর্বৃত্ত, এরা ক্রিমিনাল। এদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করব।

সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির প্রাঙ্গণে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

খালিদ হোসেন বলেন, কোনো দুর্বৃত্ত যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করে, সে যত বড় শক্তিশালী হোক তাকে আমরা আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির বিধান করব। আপনার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও পাহারা জোরদার করুন। আমি শুধু মুসলমানদের উপদেষ্টা নই, আমি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদেরও উপদেষ্টা। এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্যকে আমরা লালন করছি, আগামী দিনেও আমরা এটাকে লালন করে যাব। এ দেশে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাতকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। আমরা সবাই এদেশের নাগরিক। এদেশের উন্নয়নে সবারই অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও আমরা সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই।

তিনি বলেন, আমাদের অন্তরে এক ধরনের পাশবিক শক্তি কাজ করে। এই পাশবিক শক্তিকে দমন করতে হবে। হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, লোভ-লালসা আমাদের মানবিক গুণাবলিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমরা মানুষ, সেটাই বড় কথা। এই যে ধর্মীয় বিভাজন— আমি এক ধর্মের, আপনি এক ধর্মের, আরেকজন আরেক ধর্মের, এই যে বৈচিত্র্য, এটাই হচ্ছে একটা সুন্দর সমাজের বহিঃপ্রকাশ। আমরা পূজা ও রোজা একইসঙ্গে পালন করেছি। গিরিশ চন্দ্র সেন পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ করেছেন। আবার রামায়ণ ও মহাভারত বাংলায় অনুবাদে মুসলমানরা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আমরা এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে লালন করব এবং এই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা উজ্জীবিত হব।

ধর্ম উপদেষ্টা আশ্বস্ত করে বলেন, আমি বা আমার সরকার যতদিন দায়িত্বে আছি, ততদিন এই বাংলার কোনো হিন্দু, কোনো বৌদ্ধ, কোনো খ্রিষ্টান কিংবা অন্য কোনো নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর গায়ে যদি আঘাত করা হয়, তাহলে আমরা মনে করব— সেটা আমার গায়ে আঘাত করা হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেহাত হওয়া দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দরজা সবার জন্য খোলা।

ধর্ম উপদেষ্টা জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানের ব্যয় সংকোচন করে সেই অর্থ বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তায় দেওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির প্রাঙ্গণে বহুতল ভবন নির্মাণে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সবধরনের সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। একইসঙ্গে এই মন্দির থেকে অনাথ ও বিধবাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সম্মানিত সচিব কৃষ্ণেন্দু কুমার পালের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অশোক মাধব রায়, সাবেক সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী, সাবেক সচিব তপন চন্দ্র মজুমদার ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব  মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন কান্তি বন্ধু ব্রহ্মচারী।

আলোচনা শেষে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের আত্মার মঙ্গল ও সুস্থতা কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।

এমএইচএন/জেডএস