দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং এই তরুণরাই আগামীতে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়বে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কথা বললে তারা এমন মন্তব্য করেন। 

সন্ধ্যা থেকে টিএসসি প্রাঙ্গণ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ট্রাক, সিএনজি, ভ্যান ও রিক্সায় বন্যার্তদের জন্য খাবার, জামা-কাপড়, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসা হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ তাদের ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে করে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে এসেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া তথ্য মতে রাত ১০টা পর্যন্ত সাহায্য পাওয়া মোট নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ১৭২ টাকা। 

ঢাবি শিক্ষার্থী সাইফুল কাজী বলেন, আমার মনে হচ্ছে যেকোনো দুর্যোগের মুখে বাংলাদেশের সবাই ঐক্যবদ্ধ। তাছাড়া যেকোনো জাতীয় স্বার্থে দল, মত, নির্বিশেষে সকল মানুষ যে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে আজকের টিএসসিই তা প্রমাণ করেছে। এই ছাত্র-জনতা যদি এমন থাকে আমার মনে হয় যেকোনো সমস্যা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে।

ঢাবির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান ইনাম বলেন, আমি মনে করি এই ছাত্র-জনতাই আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়বে এবং ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করবে। এই বন্যা, যাকে আমরা রাজনৈতিক বলছি তা আমাদের বিভিন্ন মতে ভাগ হয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতাকে পুনরায় একত্রিত করেছে। 

নগদ অর্থ সংগ্রহ বুথে থাকা একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমি কল্পনাও করিনি যে সর্বস্তরের মানুষ টিএসসির মতো জায়গার ওপর আস্থা রেখে, বিশ্বাস করে এত বেশি ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তা দেবেন। আমি মনে করি আগামীর বাংলাদেশ হবে একতাবদ্ধ বাংলাদেশ, যা পূর্বে ছিল না এবং সেটা গড়বে আজকের ছাত্র-জনতা। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েই দেশের সকল সমস্যা ও দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবে। 

বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীকে গতকাল বিরামহীন কাজ করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে ত্রাণের বহর খালি করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের তদারকি করতে দেখা যায়। 

দিনভর বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী আসায় টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া ও গেমস রুম বিকেলেই পূর্ণ হয়ে যায়। পরবর্তীতে টিএসসির বারান্দায় ত্রাণ সামগ্রী স্তুপ করে রাখা শুরু হয়। টিএসসির বারান্দাতেও ত্রাণ সামগ্রীর বিশাল স্তুপ লক্ষ্য করা যায়। স্বেচ্ছাসেবকরা মানব লাইন তৈরি করে টিএসসি গেট থেকে ভেতরে ত্রাণ পৌঁছে দেন। 

ত্রাণ পরিস্থিতি নিয়ে হাসান ইনাম বলেন, ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে এত চাপ হচ্ছিল যে, আমি বিকেলে টিএসসিতে ঢুকতে পারছিলাম না। টাকা তোলার বুথে মিনিটে মিনিটে মানুষ নগদ অর্থ দিয়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন।

সাব্বির আহমেদ বলেন, আজকে সকল শ্রেণির মানুষ আমাদের ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। এখানে সাধারণ রিকশাচালক থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়িতে এসেও মানুষ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। বন্যার্ত মানুষের সহায়তায়  গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। 

সার্বিক বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে দ্বিতীয় দিনের মতো গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি চলমান রেখেছি। সর্বসাধারণ তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সাহায্য করছেন। একজন রিকশাচালক, দিনমজুরও আমাদের সাহায্যের জন্য আসছেন আবার একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য এসে আমাদের সাহায্য করছেন। এই বন্যায় দেশের মানুষ দেখিয়েছে যে তারা যেকোনো জাতীয় সমস্যা ঐক্যবদ্ধ হয়েই মোকাবেলা করবে। 

কেএইচ/এনএফ