ভারতে পালানোর সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। শুক্রবার রাতে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে তাকে আটক করা হয়। নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত মানিক সম্প্রতি কোটা ইস্যু নিয়ে টকশোতে শিক্ষার্থী ও উপস্থাপিকাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করে বেশি সমালোচিত হন।

শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলা এই সাবেক বিচারপতির কর্মকাণ্ড এখানেই শেষ নয়, তিনি দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে নানা কাজে বিতর্ক তৈরি করেছেন। আর এসব বিতর্কের কারণেই তিনি এতোটা পরিচিত বলেও মনে করেন অনেকে।

সবশেষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে নারী উপস্থাপিকার সাথে বাজে আচরণ করে আবার আলোচনায় আসেন। ওই অনুষ্ঠানে নারী উপস্থাপিকাকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন করেন তিনি। আবার যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বা সংস্কার চায় সেসব শিক্ষার্থীরাও রাজাকারের বাচ্চা বলে মন্তব্য করেন এই সাবেক বিচারপতি।

এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মানিক। তিনি বলেছিলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন পাকিস্তানের চর’। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট নোয়াখালীর আদালতে মামলা করা হয়।

বিচারপতি মানিক ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। এরপর ২০০১ আওয়ামী লীগ সরকার তাকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্টে নিয়োগ দেন। তবে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা বিএনপি তার নিয়োগের বিষয়টি সমর্থন করেনি।

জানা যায়, ২০০৩ সালে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তার গাড়ি দেখেও স্যালুট না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ করেছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকার হাইকোর্টে একজন পূর্ণ বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয় চৌধুরী মানিককে।

মানিকের বিরুদ্ধে নবম সংসদে নিন্দা এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ তাকে একজন দুঃখবাদী বলে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, মানিক ট্রাফিক সার্জেন্টদের হাইকোর্টের বিচারকের গাড়িকে সালাম না দেওয়ার কারণে আদালতে কান ধরে উঠবস করিয়েছিলেন। বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিমানের ইকোনমি শ্রেণির টিকিট কিনে জোরপূর্বক বিজনেস শ্রেণির আসনে বসে ভ্রমণ করেছেন।

২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পদোন্নতি পান বিচারপতি মানিক। ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে তাকে বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই আরও বেশি বিতর্কে জড়ান এই বিচারপতি। তিনি অবসরে যাওয়ার সময় তখনকার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সাথে তার একটি গোপন কথোপকথন রেকর্ড করেন এবং কথোপকথনটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর জের ধরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মানিককে বিদায় সংবর্ধনা দেয়নি। এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসও তার জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। অথচ অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র বিচারকদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য রয়েছে। এছাড়া বার অ্যাসোসিয়েশন মানিকের বিরুদ্ধে রায়ে স্বাক্ষর না করাসহ ১৪ জন আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ করেছিল।

এছাড়া প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বিচারপতি মানিককে বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেয়ায় তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতির অভিশংসনের আবেদন করে বিতর্কিত হন।

সবশেষ সরকারি বাড়ির ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে দুদককে নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। একটি গণমাধ্যমের সংবাদকে উদ্ধৃত করে নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অবসরে যাওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় রাজধানীর গুলশানে একটি সরকারি বাড়ি দখলে রেখেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

টিআই/এমএ