গোষ্ঠীস্বার্থে ড্যাপ বাতিলের দাবি উদ্বেগজনক : আইপিডি
গোষ্ঠীস্বার্থে ড্যাপ বাতিলের দাবি উদ্বেগজনক এবং পরিকল্পিত ও টেকসই ঢাকা গড়ার অন্তরায় বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) অনলাইনে আয়োজিত ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাতিলের দাবি, গোষ্ঠীস্বার্থ ও ঢাকার টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা’ শীর্ষক আইপিডি নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পর্যালোচনায় এ কথা উল্লেখ করেন।
বিজ্ঞাপন
আয়োজকরা বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার জন্য বাসযোগ্য নগর ও জনবসতি গড়তে দরকার নগর পরিকল্পনার প্রকৃত অনুশীলন ও কার্যকর বাস্তবায়ন। অথচ ব্যবসায়িক ও গোষ্ঠীস্বার্থে আবাসন ব্যবসায়ী ড্যাপ বাতিলের মাধ্যমে পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন করতে চায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আবাসন ব্যবসায়ীদের এই মহলের সঙ্গে কতিপয় পেশাজীবী ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ইমারত ও আবাসন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন, বিধিমালা, পরিকল্পনাকে অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে ঢাকার বাসযোগ্যতাকে বিপন্ন করে তুলেছে। স্বার্থসংশ্লিষ্ট এই মহলের ব্যবসায়িক ও গোষ্ঠীস্বার্থ যেন পরিকল্পিত ও টেকসই ঢাকা গড়ার পথে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট নগর সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, ঢাকা শহরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) ২০২২ সালে অনুমোদিত হয়, যা মেগা সিটি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা দলিল। এই পরিকল্পনা অনুমোদনের অল্প কিছুদিন পর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ও পেশাজীবীদের মতামত না নিয়েই কেবল আবাসন ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠীস্বার্থে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংশোধন করা হয়, যা ব্যাপকভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল। অনতিবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করা উচিত। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পক্ষ থেকে ড্যাপ বাতিলের দাবি তোলা হয়েছে, যা সংকীর্ণ স্বার্থ আদায়ের অপকৌশল। ফলে অন্যায্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই দাবি ঢাকার পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়ন ধারণার অন্তরায়।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আইপিডির পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সারা পৃথিবীর বাসযোগ্য শহরের নগর পরিকল্পনা কৌশল ঢাকায় এসে গোষ্ঠীস্বার্থের চাপে বদলে যাচ্ছে। প্লটভিত্তিক এবং ব্লকভিত্তিক আবাসন কৌশলের ভিন্নতাকে বিবেচনায় না রেখেই ছোট প্লটে বহুতল ভবন বানাতে চান আবাসন ব্যবসায়ীরা, যা ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা ইতোমধ্যেই হুমকিতে ফেলেছে। টেকসই ঢাকা মহানগরী গড়তে ড্যাপের শক্তি ও দুর্বলতার আলোচনার কেবল ব্যবসায়িক নয়, জনস্বার্থ, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।
আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীরা উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন তৈরি করেন, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের আবাসনে তাদের অবদান কোথায়। আবাসনের যদি এতই চাহিদা, পূর্বাচল, উত্তরা তৃতীয় পর্বসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বছরের পর বছর খালি প্লট তাহলে কেন পড়ে আছে। কৃষিজমি, প্লাবন ভূমি সংরক্ষণ করেই ঢাকার টেকসই পরিকল্পনা করতে হবে।
আইপিডি পরিচালক ড. চৌধুরী যাবের সাদেক বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীরা ড্যাপকে বৈষম্যমূলক বলছে, অথচ উচ্চবিত্তদের প্রাধান্য দিয়ে ফ্ল্যাট নির্মাণের মাধ্যমে তারাই সমাজে বৈষম্য তৈরি করছে। ফলে ফ্ল্যাট কেনার বিষয়টি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, ঢাকার পরিকল্পনায় শুধু ফ্ল্যাট বানানোর চিন্তা করলেই হবে না; এলাকাভিত্তিক স্কুল, পার্ক, খেলার মাঠ আছে কি না সেই বিবেচনাও করতে হবে।
পরিকল্পনাবিদ আবু তাহের বলেন, ঢাকা শহরের ৩ কাঠা, ৫ কাঠার মালিকদের ড্যাপ নিয়ে অভিযোগ নেই। অথচ কতিপয় স্বার্থান্বেষী পেশাজীবী আর তাদের মদদে আবাসন ব্যবসায়ীরা ড্যাপ বাতিলের দাবি জানাচ্ছে, যা অত্যন্ত নিন্দাযোগ্য।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের মোহাম্মদ মিথুন বলেন, ঢাকার মাঠ-পার্ক-জলাশয়-জলাধার দখলদাররাই চায় ড্যাপ বাতিল করতে।
এএসএস/এসএসএইচ