আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত অবস্থা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার। এরই মধ্যে ১১টি জেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে অচল হয়ে পড়েছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ টাওয়ার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এবং বন্যার পানি নামতে সময় নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। এমন অবস্থায় বন্যা কবলিত এলাকার জনগণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করার জন্য বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির সহায়তায় ১০টি ভি-স্যাট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর এরই মধ্যে ৫টি ভি-স্যাট পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যা কবলিত এলাকার জনগণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করার জন্য বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির সহায়তায় ১০টি ভি-স্যাট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারমধ্যে ৫টি ভি-স্যাট ফেনীর জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

অপরদিকে মোবাইল টাওয়ার সার্বক্ষণিক চালু রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল মোবাইল অপারেটর এবং টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানিদেরও বিটিআরসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অপারেটরদের সাথে বিটিআরসি থেকে ভার্চুয়ালি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় টেলিকম অপারেটরদের সাইট সচল রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও বিদ্যুৎ সঞ্চালনের বিষয়টিও সমন্বয় করা হচ্ছে।

পাশাপাশি টেলিকম অপারেটরদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অটুট রেখে পর্যাপ্ত পাওয়ার ব্যাকআপ (ব্যাটারি ব্যাকআপ, ডিজেল জেনারেটর, পোর্টেবল জেনারেটর ইত্যাদি) এর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, বন্যায় টেলিযোগাযোগ অব্যাহত রাখতে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একইসঙ্গে কমিশনে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলের সাধারণ জনগণ জানমালের ক্ষতিসহ অনেক ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। এর প্রভাবে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সব ধরনের টেলিযোগাযোগ সেবা অব্যাহত রাখতে এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন এবং পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা (মোট ১৫ জন) কাজ করবেন।

ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের কার্যপরিধি সম্পর্কে তিনি জানান, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই টিমের কর্মকর্তারা অন্যান্যদের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ বজায় রেখে কাজ করবেন। এক্ষেত্রে দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্ব পালন করা, বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে সকল অপারেটরদের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে দিকনির্দেশনা দেওয়া, দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত নেটওয়ার্ক পুনর্গঠনের কার্যক্রমে সমন্বয় করা এবং কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্যদের দুর্যোগের সময়ে নেটওয়ার্কের হালনাগাদ তথ্য সময়ে সময়ে অবহিত করার বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে বিটিআরসির জরুরি রেসপন্স টিমের সাথে যোগাযোগের জন্যও চালু করা হয়েছে বিশেষ হটলাইন। প্রয়োজনে যে কেউ চাইলে +৮৮০২২২২২১৭১৫২ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়া বিটিআরসির কল সেন্টার ১০০ ও আপদকালীন সময়ে জরুরি সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।

আরএইচটি/এমএ