ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ গঠনে নতুন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছে। নতুন সরকার দেশবিদেশে সমানতালে কাজের মাধ্যমে নিজেদের জানান দিতে চায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে তার যে ইমেজ রয়েছে, তা কাজে লাগাতে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে বার্তা দিয়েছেন ড. ইউনূস।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা এবং বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ওই দুই বৈঠকে উপদেষ্টা বলেছেন, বিদেশে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের যে ভাবমূর্তি রয়েছে তা আমরা কাজে লাগাতে পারি। প্রধান উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন, দেশের প্রয়োজনে কূটনীতিকরা ওনার ফেস ভ্যালু ব্যবহার পারবেন। প্রধান উপদেষ্টার ফেস ভ্যালু ব্যবহার করলে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারব।

ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই তার সুনাম রয়েছে এবং তার ভাবমূর্তি খুব উজ্জ্বল। ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি কূটনীতিকরা ব্যবহার করতে পারলে দেশের অনেক উপকার হবে। বিশ্বের সাতজন ব্যক্তি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। তিনি সেই সাতজন ব্যক্তির মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি।

ড. ইউনূসের দেখানো পথেই যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য কাজ করছে গ্রামীণ আমেরিকা। তার দর্শনের ভিত্তিতে ৪০০ কোটি ইউরো ব্যয়ে প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিক ভিলেজ তৈরি হয়। এর আগে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকেও তার সরব উপস্থিতি ছিল।

ড. ইউনূস বিগত ২০০৯ সালে দারিদ্র্য নিরসনে সহায়তা করার জন্য এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। এই উপদেষ্টা পরিষদ উন্নয়ন সংস্থার মূল বিষয় ও নীতি প্রণয়নে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ড. ইউনূসের দেখানো পথে দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ বা সামাজিক ব্যবসার মডেল বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে ১৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ধারণ করে চলছে।

এ ছাড়া পৃথিবীর ৮০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে তার নামে ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ড. ইউনূসের চিন্তা, কাজ, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও তার জীবনাদর্শ নিয়ে গবেষণা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি ২৪টি দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ৬০টির মতো সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। ১৩০টির বেশি সম্মাননা পেয়েছেন ৩০টির বেশি দেশ থেকে। তাছাড়া কানাডা ও জাপানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ড. ইউনূসের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কূটনীতিকরা আরও বলছেন, ড. ইউনূসকে সবাই এক নামে চেনেন। কানাডার পাঠ্যপুস্তকে তার জীবনী থাকার পাশাপাশি দেশটির একটি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে ড. ইউনূসের ছবি টানানো আছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধারে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে দীর্ঘদিন যে ধরনের টানাপড়েন চলছিল তার অবসান ঘটিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে স্বস্তির সুবাতাস পাওয়া যাবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক কেমন হতে পারে, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

তবে ড. ইউনূসের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিজে থেকে টেলিফোন করার বিষয়টি ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে ঢাকার এক জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা নিজে মোদিকে ফোন করে কথা বলেছেন। তিনি যেমন সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় মোদিকে আশ্বাস দিয়েছেন তেমনি দিল্লির সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। এটি খুবই ইতিবাচক দিক।

এনআই/এসএসএইচ