কোটাবিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ১৮ শতাংশই ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু এবং প্রায় ৫১ শতাংশ নিহত ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণ-যুবক। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছে।

সোমবার (২০ আগস্ট) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) আয়োজিত ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনটির গবেষণা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। প্রতিবেদনে জানানো হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় দৈনিকগুলোর সূত্র থেকে আমরা ৮১৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। এর মধ্যে ৬৩০ জনের নাম জানা গেলেও ১৮৯ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও আমরা গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসকল বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাচ্ছি তার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে সহস্রাধিক হবে।

এতে বলা হয়,  আমরা তথ্য পাওয়া ৮১৯ জনের মধ্যে ৪৭০ জনের বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। তাদের মধ্যে ১৮ বছরের কমবয়সি শিশু ৮৩ জন (১৮%), তরুণ ও যুবক বয়সী ২৪০ জন (৫১%), মধ্যবয়সী ১২৬ জন (২৭%), এবং বয়স্ক ব্যক্তি আছেন ২১ জন (৪.৫%)। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো নিহতদের মধ্যে যাদের বয়স জানা গেছে, তাদের মধ্যে ৬৯ শতাংশেরই বয়স ৩০ এর কম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে ৫ শতাধিক থানা, ফাঁড়ি ও সরকারি স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও কমপক্ষে ৮ শতাধিক ঘরবাড়ি, যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১২টি জাতীয় দৈনিক, এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এই আন্দোলনে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির উপদেষ্টা ও আইন সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলামসহ আরও অনেকে।

টিআই/এমএ