পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন

প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া এবং ইউরোপ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে আমাদের প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, এসব পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে পাখি নিধনও কমেছে। আর পাখি নিধন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সবার সহযোগিতা চাই।

শনিবার (৮ মে) বন অধিদফতর আয়োজিত বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস-২০২১ অনলাইন আলোচনায় যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘পাখির মত গান গাই, উড়ে যাই সুউচ্চ দিগন্তে’।

শাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ীসহ প্রায় ৭১০ প্রজাতি পাখি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসীলে ৬৫০ প্রজাতির পাখি রক্ষিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি শিকার/হত্যার জন্য সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সোনাদিয়া, নিঝুম দ্বীপ, টাংগুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর এবং গাঙগুইরার চর ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিযায়ী জলচর পাখির পরিযায়ন পথ বিষয়ক গবেষণার উদ্দেশে পাখিশুমারি ও পাখির গায়ে রিং পরানো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিপিএস স্যাটেলাইট ট্যাগিং করা হচ্ছে। এতে পরিযায়ী পাখির পরিযায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে।

বনমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী অবৈধভাবে পাখি শিকার ও বাণিজ্য বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের হাতেনাতে ধরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। যার ফলে বর্তমানে এ সংক্রান্ত অপরাধ বহুলাংশে কমে গেছে। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পথসভা, র‌্যালি, আলোচনা সভা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার শামুকখোল পাখির কলোনির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পরিবারের মাঝে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকার পুরস্কার প্রণোদনা প্রদান করে থাকে- যোগ করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী শকুনের মরণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বিক্রি সারাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুন্দরবন ও সিলেটে দুটি ভালচার সেভ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীসভায় শকুন রক্ষায় ক্ষতিকর ‘কিটোপ্রোফেন’ ওষুধের উৎপাদন বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনগণের সহযোগিতা নিয়ে বর্তমান সরকার পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সফল হবে।

আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এবং বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ফেডারেশন এর সভাপতি ড. এস এম ইকবাল প্রমুখ।

এমএইচএন/এমএইচএস