কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধের দায় সরকার, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি লিমিটেড পিএলসিকে (বিএসসিপিএলসি) নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। 

আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্রাব) আয়োজিত ‘ইন্টারনেট বন্ধের কারণ ও বিটিআরসি দুর্নীতি-অনিয়ম’ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গতমাসের ১৬ এবং ১৭ জুলাই রাজধানীর কিছু অঞ্চলে সীমিত পরিসরে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ হলেও ১৮ জুলাই থেকে সারা দেশে একযোগে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোবাইলের ভয়েস কল ও মেসেজ সচল থাকলেও আন্তর্জাতিক কোনো মেসেজ দেওয়া যায়নি। আর ইন্টারনেট বন্ধের যুক্তি হিসেবে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিভ্রান্তিমূলক ও হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে জাতির সঙ্গে পরিহাস করেছেন। এমনকি আইএসপিএবি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা গত ১৯ জুলাই  প্রতিমন্ত্রীকে ইন্টারনেট চালু করার জন্য অনুরোধ করে ফোন করেছিলাম। তিনি আমার কথা না শুনেই ফোন রেখে দেন। পরে ২৭ জুলাই আমাদের একটি টিম খাজা টাওয়ার পরিদর্শন করে দেখতে পায় সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আসলে খাজা টাওয়ারের ডাটা সেন্টারকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ সার্ভার লকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখান থেকে কোনো ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয় না। তবে এখানে অবস্থিত কয়েকটি আইআইজি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে।

তিনি বলেন, দেশে ইন্টারনেটের জোগান দিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্টোরিয়াল ক্যাবল) ভারত থেকে স্থল পথ দিয়ে ২৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আমদানি করে। আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসি সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে সিমিইউ-৪ এবং সিমিইউ-৫ দিয়ে আরও ২৫০০ থেকে ৩০০০ এর মত জিবিপিএস আমদানি করে থাকে। ইন্টারনেট সেবার জন্য এই ব্যান্ডউইথ এবং ক্যাশ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্টারনেট বন্ধের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সেসময় সরকারের নির্দেশে এনটিএমসির দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়া ব্যান্ডউইথ সরবরাহের মূল জায়গাটি বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে মোবাইল অপারেটর এবং আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে রাখার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। ফলে মোবাইল অপারেটর, আইআইজি, আইএসপি সবাই নিরুপায় হয়ে যায়। দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এই সব ঘটনা জানে। তারাও ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখার জন্য সহযোগিতা করেছে। এমনকি মোবাইলে অপারেটর আইআইজি আইএসপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বিটিআরসি থেকে। এমনকি মোবাইল অপারেটরদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভীতিকর খুদেবার্তা গ্রাহকদের পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বাধ্য হয়ে একমাত্র গ্রামীণফোন দেশের কয়েকটি অঞ্চলের গ্রাহকদের এসব খুদে বার্তা পাঠালেও রবি এবং বাংলালিংক খুদে বার্তা পাঠানো থেকে বিরত থাকে। সেজন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখার দায় তৎকালীন সরকার, এনটিএমসি, বিটিআরসি এবং বিএসসিপিএলসিকে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিটিআরসি একটি ব্যর্থ এবং দলীয় কমিশনে পরিণত হয়েছে। এখানে দলীয় পরিচয় এর ভিত্তিতেই চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে।

এ সময় তিনি বেশকিছু দাবিও তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে —

◑ কোনো অবস্থা বা কোনো পরিস্থিতিতেই আর ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধ করা চলবে না। ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

◑ ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে।

◑ সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করতে হবে।

◑ বিটিআরসির চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সিন্ডিকেট, দুষ্টুচক্র এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে দ্রুত অপসারণ করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

◑ বিটিআরসিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠা হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে। এতে মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই হস্তক্ষেপের করতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির অন্যান্য নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছেন।

আরএইচটি/এমএ