সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার চেয়ে মাঠে নেমেছিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলন দমাতে শুরু থেকেই মারমুখী ছিল পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়ন আর ধরপাকড়ে ছাত্রদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। কোটার আন্দোলন গিয়ে ঠেকে এক দফার সরকার পতনের আন্দোলনে। সেই আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ পুলিশ। থানা ও ট্রাফিক স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ সদস্যদের মারধর ও হত্যার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী— সংঘর্ষ ও হামলায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার নিহতের সংখ্যা চার শতাধিক।

সরকার পতনের পর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ছাত্র-জনতার রোষের মুখে পুলিশের অধিকাংশ সুবিধাবাদী ও সরকার বা আওয়ামী ঘেঁষা কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান। এদের কেউ কেউ এখন নজরদারিতে আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন ও সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে সর্বমহলে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও পুলিশকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, স্থাপনার ক্ষত না হয় সারানো যাবে, বিকল্প স্থাপনায় কাজ শুরু করা যাবে। কিন্তু সাধারণ পুলিশ সদস্যের মনে যে ট্রমা তৈরি হয়েছে, হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কতদিনে কাটবে সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক দিন ধরেই পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। মানবাধিকার সমুন্নত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়েই পুলিশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার পুলিশকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সকল পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি রোববার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি, তাদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা চাকরিতে ইচ্ছুক নন।

এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেতলিয়ে ফেলা, এটা টলারেট করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না।

ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তা গত ৫ আগস্টের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ঢাকা পোস্টের কাছে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি জানানোর পরও ওয়ারলেস সেটে ডিসপ্যাচ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি বুঝে ছত্রভঙ্গ করা থেকে বিরত থেকে নিবৃত হন। কেউ কেউ আগেই আত্মগোপনে চলে যান। ওই মিছিলটি জাহাঙ্গীর গেটে পৌঁছানোর পর কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত হয়ে অনেক কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফোনে ও ওয়্যারলেস সেটে গালিগালাজ করতে থাকেন। গুলির নির্দেশ ও ছত্রভঙ্গ করতে যা যা করা দরকার তাই করতে নির্দেশ দেন। পরিস্থিতি বুঝেও শক্তি প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

আক্ষেপ করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার আক্রান্ত হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জুনিয়র সদস্যদের ফেলে পালিয়ে যান। সেদিন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি বুঝেও শক্তি প্রয়োগে মনোযোগী ছিলেন। পরবর্তীতে নিজেরা পালিয়ে যান। কিন্তু সাধারণ পুলিশ সদস্যদের কী হবে, সেটা ভাবেননি। কোনো নির্দেশনাও দেননি। কে কীভাবে বাঁচবে ছাত্র-জনতার রোষ থেকে সেটা কেউই ভাবেননি। লেজুড়বৃত্তির বা সরকারঘেঁষা কর্মকর্তাদের কারণে সাধারণ অনেক পুলিশ সদস্য মার খেয়েছে, নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত যারা দুঃসময়ে মাঠ পর্যায়ের সাধারণ সদস্যদের রেখে পালিয়ে গেছেন।

মাসখানেক আগেই পুলিশে যোগদান করা এক নারী কনস্টেবল ঢাকা পোস্টকে সেদিনের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। তিনি নিজে একপ্রকার ট্রমায় ভুগছেন বলে জানান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ট্রেনিং করে সবে যোগদান করেছি রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায়। এর মধ্যে ঢাকায় আন্দোলন। গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। কিন্তু আমাদের কী করা উচিত সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি। থানার সিনিয়র কর্মকর্তারা যেভাবে পেরেছেন আত্মগোপনে গেছেন। বিকেলে থানা জিম্মি করা হলো। সন্ধ্যায় হামলা হলো, আগুন দেওয়া হলো। জীবন বাঁচাতে পোশাক বদলে কয়েকজন আমরা নারী পুলিশ সদস্য একযোগে বের হই। কিন্তু নিস্তার পাইনি। জনতার এলোপাথাড়ি মারের মুখে পড়ি। কোনো রকমে স্থানীয় একজনের বাসায় আশ্রয় পাই। আতঙ্ক নিয়ে রাত পার করি। পরদিন স্থান বদল করি। দু-দিন পর ঢাকা ত্যাগ করে গ্রামে ফিরে যাই।

তিনি বলেন, আমি ট্রমায় আছি। এখনো কিছুই পরিষ্কার নয়, কী থেকে যেন কী হয়ে গেল। এমন দিন আসবে ভাবিনি। আমার মতো সাধারণ পুলিশ সদস্যদের অবস্থা প্রায় একই। ট্রমায় ভুগছি আমরা। এখন ডাক এসেছে যোগদানের। থানা তো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। থানায় না হয় ফিরলাম। কিন্তু আমার হৃদয়ের ক্ষত, মানসিক অবস্থা কাকে বোঝাব। যদি ফিরিও আতঙ্ক কি কাটবে?

আন্দোলনে বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করায় সিনিয়র কর্মকর্তা থাপ্পড় মারার হুমকি দেন বলে জানান পুলিশের এক পরিদর্শক। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলপ্রয়োগের নির্দেশনার পর আমাদের কিছুই করার থাকে না। অনেক সহকর্মী আন্দোলনকারীর ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গুলি করেছে। বিরোধিতা করে আমি থাপ্পড় ও হুমকি খেয়েছি। আজ তারা নেই, পালিয়েছেন। আতঙ্ক এখনো কাটেনি। এখন তো চাকরির নিরাপত্তার সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তারও শঙ্কা রয়েছে।

দলীয় লেজুড়বৃত্তি করা কর্মকর্তাদের তালিকা হচ্ছে

জানা গেছে, ‘পুলিশ হবে জনতার’ সবসময় এমন স্লোগান দিয়ে আসা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই জনতার বিরুদ্ধে গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিরোধী মত ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নে পুলিশের কিছু কর্মকর্তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার পতনের পর সেই কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে এই অস্ত্র দেওয়া ঠিক হয়নি। পুলিশ বাহিনীকে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো এভাবে ব্যবহার করা যাবে না। পুলিশ চলবে পুলিশ কমিশনের অধীনে। এই পুলিশ হবে জনগণের পুলিশ।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তাতে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। পুলিশকে কারা ব্যবহার করেছে, আপনারা তাদের ধরুন। আমি চেষ্টা করব হুকুমদাতাদের ধরতে। কারা পুলিশকে এভাবে ব্যবহার করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কী— এটাও খুঁজে দেখতে হবে।’

ডিএমপিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে আসছে বড় রদবদল

পুলিশ মহাপরিদর্শকের ঘনিষ্ঠ অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারা কী করেছেন, কার কী ভূমিকা ছিল, পুলিশ প্রবিধান, প্রচলিত আইনের বাধ্যবাধকতা ভুলে কারা রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাদের ধরা হবে। কারো চাকরি যাবে, কারো পদের অবনতি হবে। অনেককে বদলি করা হবে। ডিএমপিসহ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে ব্যাপক রদবদল করা হবে। তালিকা হচ্ছে, কাল বা পরশু থেকে সার্কুলার জারি শুরু হবে।

পুলিশ ছাড়া সম্ভব নয়, কিন্তু...

সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাধীন দেশে পুলিশ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব নয়। কিন্তু এই আন্দোলনে এতো এতো প্রতিষ্ঠান থাকতে পুলিশের উপর কেন এতো ক্ষোভ গেল? পুলিশ সরকারের দৃশ্যমান শক্তি। শক্তি বলতে কী বোঝায় তা আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দিয়ে দেখিয়েছে। এখন পুলিশ ট্রমার মধ্যে আছে। এতো এতো পুলিশ সদস্য হতাহত হলো, থানাসহ নানা স্থাপনা আক্রান্ত হলো। পুলিশের এই ভীতি-আতঙ্ক কাটতে সময় লাগবে।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বা আইজিপি পুলিশকে পুনর্গঠন করতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা জরুরি। ফেরানোর উদ্যোগটা ভালোভাবেই নিতে হবে সবাইকে। কারণ, পুলিশকে সমাজ শৃঙ্খলায় লাগবেই। হয়ত কয়েকদিন সময় লাগবে, সব স্বাভাবিক হবে। কিন্তু ট্রমা কাটতে সময় লাগবে। পুলিশের অবস্থা এখন গোয়াল পোড়া গরুর মতো- এই বুঝি আগুন এলো অথবা চোর পড়া ঘরওয়ালীর মতো- এই বুঝি চোর এলো।

তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, গত ১৫ বছরে পুলিশকে যেভাবে লাঠিয়াল বা ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তা অন্য কোনো সময় ছিল না। যদিও এই সরকারের অংশীদার আমিও ছিলাম। কিন্তু কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না।

শুদ্ধাচারের কথা বলে লাভ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে পুলিশ পুনর্গঠিত হবে। কিন্তু ২/১ বছর পর রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলে সেই রাজনৈতিক ব্যবহার শুরু হবে। সেখান থেকে মুক্তি বা আলো আসার সম্ভবনা দেখি না।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, পুলিশ তো বড় ভুল করেছে আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করে। এরপর তো ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকা সবাই দেখেছে। এর বিচার অবশ্য সময়সাপেক্ষ। কমিশন বা ইনক্যুয়ারি কমিটি গঠন করতে হবে। লম্বা সময়ের ব্যাপার। কারো ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হলে বা কেউ ইচ্ছেকৃত গুলি করে থাকলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হতে হবে।

সঠিক বন্দোবস্ত হলে ট্রমায় থাকবে না পুলিশ

সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগেও এমন হয়েছে কিন্তু এবার পুলিশকে অনেক বেশি চাপে পড়তে হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিশ্চিতভাবে জনগণের আস্থা ফেরানোই পুলিশের বড় চ্যালেঞ্জ। সেই বন্দোবস্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ সদস্যদের ফেরানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটিই সঠিক সিদ্ধান্ত। পুলিশে কাজ করতে হলে এ রকম সংকট আসতেই পারে। সেটা মোকাবিলার মানসিকতা থাকতে হবে। আমি মনে করি দৈনন্দিন কাজের মধ্য দিয়ে পুলিশকে দৃশ্যমান হতে হবে।

আন্দোলনে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশের লোগো ড্রেস চেঞ্জ হবে। সব পুলিশ যে খারাপ বা দানব হয়ে উঠেছিল তা বলা যায় না। কিন্তু এই পোশাক পরে বের হতে চান না তারা। আমরা বলেছি, চট করে তো কিছু করা যায় না, সময় লাগবে।

আশ্বাস পেয়ে ফিরছেন কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা

সরকার পতনের পর নতুন আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাব মহাপরিচালককে পদায়ন করা হয়েছে। নতুন আইজিপি ময়নুল ইসলাম রাজারবাগে বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দরবারে বসেছিলেন। সেখানে হট্টগোল হয়। বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। আতঙ্ক-নিরাপত্তাহীনতায় ট্রমায় ভোগা পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরানোর উদ্যোগের কথা বলা হয়।

কর্মস্থলে নিরাপত্তা, ৫ আগস্টসহ আগে ও পরে সহিংসতায় আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ, পুলিশ সংস্কারসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভসহ কর্মবিরতি পালন করছিল পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে পুলিশের বড় একটি অংশ কর্মবিরতিতে ছিলেন। রোববার (১১ আগস্ট) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করা, পুলিশ বাহিনীকে যেন কোনও দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা, কর্মে ফেরার পর চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেন। সেসব দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাসের সাপেক্ষে কর্ম বিরতিসহ সব আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেটা হয়েছে সেটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। পুলিশকে ইতোমধ্যে সংস্কারের উদ্যোগের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ উর্ধ্বতনরা। পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগোতে পরিবর্তন আসবে।

জেইউ/এমজে