গত ২৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত দ্রুতগতির গণপরিবহন মেট্রোরেল। ফলে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চালু হওয়া এই বাহনে যারা যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। সবার একটাই প্রশ্ন, কবে চালু হবে মেট্রোরেল? তবে আপাতত আশার খবর এটিই— আজ (রোবরার) মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের। এরপরই জানা যাবে সিদ্ধান্ত।

মেট্রোরেল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনের মধ্যে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ছাড়া বাকি ১৪ স্টেশনে কোনো ক্ষতি হয়নি। এই স্টেশনগুলো দিয়ে অনায়াসে যেকোনো ট্রেন অপারেশন করা যাবে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, ট্রেন চালানোর সব ব্যবস্থা ঠিক আছে। তবে দীর্ঘদিন মেট্রো বন্ধ থাকায় এটির সব ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, তা দেখার জন্য পরীক্ষামূলক চালানোর আন্তর্জাতিক রীতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের অনুমতি পেলে পরীক্ষামূলক চালানো শুরু করা যাবে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আওতায়। ফলে উনি যদি আজ অফিস করেন, তবে এই বিষয়ে সড়ক সচিব নির্দেশনা চাইতে পারেন।

অন্যদিকে অবিচার ও বৈষম্য দূরীকরণে ছয় দফা দাবি আদায়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ৭ শতাধিকেরও অধিক কর্মচারী। ইতোমধ্যে তারা দুই দিন মানববন্ধন করে এ কথা জানিয়েছে।

১০ থেকে ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের দাবি হলো— সব গ্রেডে একই রকম বেতন কাঠামো যা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর ২.৩ গুণ হারে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ দিতে হবে; চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ সেন্ট্রাল প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) সুবিধা দিতে হবে; অন্যান্য সব সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ও অন্যান্য দেশের মেট্রোর পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করে পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু এবং সব ধরনের ভাতা সম্বলিত সার্ভিস রুলস দ্রুত সময়ের মধ্যে দিতে হবে; শিক্ষানবিশকাল শেষে স্থায়ীকরণ করতে হবে; স্টেশন ও ডিপোসহ সব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; কর্মক্ষেত্রে স্বৈরাচারী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক আচরণ এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যাবে না।

মেট্রোরেল চালু ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি প্রসঙ্গে জানতে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিকের মোবাইল ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানিয়েছেন, আজ বিষয়টি নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এরপরই মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় মেট্রো লাইনের নিচের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই ট্রেন ছুটে যায়। পরে জননিরাপত্তার স্বার্থে ওই দিন বিকেল সাড়ে ৫টার পর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরদিন ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওইদিন পল্লবী ও মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশনেও হামলা হয়।

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ পর্যন্ত সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর চালু করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ যাত্রী যাতায়াত করতেন।

এমএইচএন/এমজে