সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর আক্রমণ, ভাস্কর্য-শিল্পকর্ম ভাঙচুরের এবং থিয়েটার দলের ওপর আঘাতের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ থিয়েটার কর্মীরা। বুধবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির সামনে তারা মানববন্ধন করেছেন।

এতে উপস্থিত থিয়েটার কর্মীরা বলেন, মাত্র দুদিন আগে হাজার তরুণ প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটি দীর্ঘ দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। ৫ আগস্ট এসেছে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা, শিশুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। যার নাম আজ ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’। ছাত্রদের দাবি পূরণের একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ক্ষমতাসীনেরা তাদের সীমাহীন দম্ভ, প্রতিশোধ পরায়ণতা এবং জনবিচ্ছিন্নতার কারণে সহিংস করে তোলেন। রাষ্ট্রীয় নির্বাহী ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তারা ভেবেছিলেন এই সব সম্ভবের দেশে কিছুই অসম্ভব নয়। হাজার মৃত্যু কেন লক্ষ মৃত্যুও কোনো বিষয় নয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আজ আমরা এখানে বিজয়ের উৎসব পালনে আসিনি। বরং অত্যন্ত উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা প্রকাশে এসেছি। দীর্ঘদিনের ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সাবেক ক্ষমতাসীন দল মুখস্থ বুলির মতন যে ভয়ের জুজু দেখিয়ে ফিরত তা-ই যেন খুব পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস আক্রমণ, ভাস্কর্য এবং শিল্পকর্ম ভাঙচুর, থিয়েটার দলের ওপর আঘাত এবং জ্বালাও পোড়াও চলছে নির্বিচারে। অথচ শাসন ও শাসক বদলের ক্রান্তিকালে ভয়াবহ নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা সবসময়ই থাকে। প্রশাসনিক অস্পষ্টতা, শূন্যতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে দুষ্কৃতিকারীরা ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটতরাজ চালানো শুরু করে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট, থানা জ্বালিয়ে দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এবং বিখ্যাত ঐতিহ্য ময়মনসিংহের শশীলজসহ নির্বিচার ভাঙচুর, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপরে হামলা, তাদের সম্পত্তি লুটপাট ও পোড়ানো শুরু হয়।

তারা আরও বলেন, আজ পর্যন্ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু ও তাদের বাসাবাড়িতে, ধর্মস্থানের ওপর হামলা লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাতটির মতো থিয়েটার দল পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পাচ্ছি। প্রাচ্যনাটের থিয়েটার কর্মী এবং জলের গানের মূল সমন্বয়ক রাহুল আনন্দের বাড়ি এবং তার সব বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা শুধু নিন্দা বা উদ্বেগের নয়, বরং আক্ষেপের।

সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে ও মিডিয়া কর্মীদের ওপরও হামলা হয়েছে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, বহু হামলার খবর মিডিয়ায় পরিবেশিত হয়নি। তাছাড়া বিভিন্ন থানায় ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের ওপর হামলা করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করছেন। নৃশংস সব মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে নিয়মিত আসছে। এরকম পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গা থেকে আমরা শিল্পী, শিল্প সংগঠক, থিয়েটারকর্মী এবং থিয়েটার দলগুলোর পক্ষ থেকে চরম উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার খবর পাচ্ছি। আজ পর্যন্ত আমরা জানি যে সারা দেশে পুলিশের অনুপস্থিতি বজায় আছে এবং গতকাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর টহলও নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। তাই এমন অবস্থায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘোরতর আশঙ্কার কথাও বলেন তারা।

অতি দ্রুত একটি সুস্থ সভ্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানিয়ে উপস্থিত থিয়েটার কর্মীরা বলেন, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস একযোগে রুখে দিতেও আমরা বদ্ধপরিকর।

এসময় গণআন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিক্ষুব্ধ থিয়েটার কর্মীরা।

আরএইচটি/এসএসএইচ