ফাইল ছবি

দেশব্যাপী হামলা, লুটপাট বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ৫৩ জন নাগরিক। বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসককে বিদায় করে পৃথিবীর বুকে আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসন দেশে এমন এক ভয়ংকর অবস্থা তৈরি করেছিল যে সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থী ও নিরীহ জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দুর্নীতি, হানাহানির মাধ্যমে সমাজে এক গভীর বিভেদের ক্ষত তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতার শহীদি আত্মত্যাগে সেই শাসনব্যবস্থা উৎখাত হয়েছে।

গণবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরা নিজেরা নিরাপদে সরে গেলেও বাংলাদেশেকে রেখে গেছে চরম নৈরাজ্য এক পরিস্থিতিতে। যার ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গণধোলাই, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এতে বিশেষ আতঙ্কে পড়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী, আদিবাসীসহ নানা লিঙ্গ ও বর্ণের মানুষ। অনেক মন্দির, বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানে হামলা করা হচ্ছে বলে আমরা সংবাদমাধ্যম এবং ভুক্তভোগী সূত্রে জানতে পেরেছি। কোথাও কোথাও তাদের ওপর শারীরিক নিপীড়নও চালানো হচ্ছে।

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, পুলিশ বাহিনী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসন টিকিয়ে রাখতে নির্বিচারে গুলি চালালেও এখন তারা কর্মবিরতিতে আছে। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জানমাল অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা অবাধে লুটপাট, ডাকাতি, হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

আমরা মনে করি, অবিলম্বে পুলিশের সব সদস্যসহ, আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীকে নিজ উদ্যোগে সক্রিয় হতে হবে। মানুষের জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা দিতে হবে। চাকরিবিধি অনুযায়ী তাদের যে পবিত্র দায়িত্ব কোনো অবস্থায় তা থেকে বিরতি নেওয়া যায় না। অতীতের মতো আবারও যদি পুলিশ জনগণের ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ গভীর অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে।

শত শত মানুষের প্রাণহানির মাধ্যমে অর্জিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা যেন অঙ্কুরে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য দলমত নির্বিশেষ সবাইকে যার যার দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। পরমতসহিষ্ণুতা, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ছাত্রজনতার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, সংঘাত পরিহারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সব শ্রেণি, পেশা, বিশ্বাসের মানুষকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন– আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ ড. আজফার হোসেন, সাংবাদিক ও গবেষক আবু সাঈদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, কবি কাজল শাহনেওয়াজ, নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম, কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নৃবিজ্ঞানী ও নারী অধিকার কর্মী সায়েমা খাতুন, প্রকৌশলী লুতফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ, কথাসাহিত্যিক জিয়া হাশান, পাপড়ি রহমান, মাহবুব মোর্শেদ, লেখক ও অনুবাদক ওমর তারেক চৌধুরী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলোর অধ্যাপক নাদিন শান্তা মুরশিদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোলগেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক নাভিন মুরশিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক, কথাসাহিত্যিক অস্ট্রিক আর্যু, লেখক ও অনুবাদক দিলওয়ার হাসান, সংগঠক মোহাম্মদ রোমেল, লেখক কামরুল আহসান, সংগীতশিল্পী সোহেলি মনি, কবি বায়েজিদ বোস্তামী, কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কবি অর্বাক আদিত্য, হাসান জামিল, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, অধিকারকর্মী ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, ব্লগার কৌশিক আহমেদ, লেখক বাকী বিল্লাহ, কবি ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, সংগীতশিল্পী রাজ্য, লেখক মারুফ বরকত, সাংবাদিক সেলিম খান, কথাসাহিত্যিক তানজিনা হোসেন, জনস্বাস্থ্য কর্মী আসফিয়া আজিম, ডিজাইনার শামিমা সুলতানা, খাদিজা রহমান, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, অধিকারকর্মী মোহাম্মদ আরজু, কবি টোকন ঠাকুর, লেখক কে এম রাকিব, মুরাদ কিবরিয়া, বিজ্ঞানী মাহবুব সুমন, শিল্পী বীথি ঘোষ, সুস্মিতা রায় সুপ্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আজম, নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন, প্রকাশক দীপক রায়, মাহবুব রাহমান, অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক দীপক সুমন, সংবাদকর্মী খাদিজাতুল কোবরা, ইসমাঈল হোসেন।

এমএইচএন/এসএসএইচ