শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কোনো আন্দোলন বিশ্বের কোথাও কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনও ব্যর্থ হবে না। এই জেনারেশনকে ‘জেড জেনারেশন’ বলা হয়। এরা স্ট্রেট ফরওয়ার্ড, এদেরকে সহজ কথা বলতে হবে, এদের আদালত দেখিয়ে লাভ নেই। 

আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে ৬১ জন মানুষ মারা গেছে। আর ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে চার গুণ বেশি মানুষ মারা গেছে। গণঅভ্যুত্থান কাকে বলে, যেখানে সকল শ্রেণির পেশার মানুষরা যে আন্দোলনে আসে। এই আন্দোলনে শিশু এসেছে, নারী এসেছে, সাংবাদিক এসেছে, শিক্ষক এসেছে, আইনজীবী এসেছে চিকিৎসক এসেছে, এমন কোনো পেশার মানুষ নেই যারা এই আন্দোলনে আসেনি, অথবা সমর্থন জানায়নি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে, সেই রেশ এখনও চলছে, আর এর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় যে অভ্যুত্থান হয়েছিল ৬০ জন মানুষ মারা গিয়েছিল, পাকিস্তানের ইমরান খানের সময় যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেখানে ১২ জন মানুষ মারা গেছিল, বেলারুশে যে আন্দোলন সেখানে এক ডজন মানুষ মারা গেছে। অথচ আমাদের দেশে নাগরিকদের মারার জন্য আপনি হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করেছেন। ঘরের মধ্যে শিশুকে মারা হয়েছে, নারীকে মারা হয়েছে, সাংবাদিক মারা হয়েছে। 

এই অধ্যাপক বলেন, ৬ জন সমন্বয়কে ডিবি নিয়ে গেছে, তাদের পরিবারের যে ট্রমা তা বলে বোঝাবার নয়। এ ছাড়া গুজব ছড়ানোর কথা বারবার বলা হচ্ছে। যত বেশি ইন্টারনেট বন্ধ করবেন তত বেশি গুজব ছড়াবে চারিদিকে। শুধু পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কোনো সরকার টিকতে পারে না। এই যে দেয়াল লিখন, ছাত্রদের চিৎকার, এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে। 

ওবায়দুল কাদেরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তার দলের লোকেরাই তাকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিয়েছে। মত বিনিময় নামে নেতাদের ডেকে মত বিনিময় করেন না। তাদের কথা শোনেন না। সেজন্যই তার দলের নেতারা তাকে গতকাল বলেছে ভুয়া ভুয়া। তার মানে কি? আপনি আপনার নিজের দলের লোকজনের সঙ্গে সংলাপে যেতে পারেন না। আপনি তাহলে কিভাবে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে সংলাপ করবেন? ছাত্রদের যেসব দাবি তাদের সাথে তাহলে কিভাবে সংলাপ করবেন? অথচ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই খুলে দেখেন, সেখানে প্রথম কথায় লেখা আছে গভর্নমেন্ট বাই ডিসকাশন। অর্থাৎ সরকারের কাজ হচ্ছে আলোচনা করা, আলোচনা করা, আলোচনা করা। আপনি নিজ দলের লোকদের কাছেই সংলাপ শোনেন না, তাহলে অন্য মানুষের দাবি সংলাপ কিভাবে আপনি শুনবেন?

এএসএস/এনএফ