আন্দোলনের সময় সংঘটিত প্রতিটি মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি বিধানসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

বুধবার (৩১ জুলাই) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির।

বাপার অন্য তিনটি দাবি হচ্ছে— সকল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অবিলম্বে খুলে দিয়ে ক্যাম্পাসে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। সে লক্ষ্যে হলগুলোর ব্যবস্থাপনা কোনো ছাত্রসংগঠনের পরিবর্তে হল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন তাদের সকলের পরিবারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অন্যান্য সমর্থন প্রদান করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় কোটা আন্দোলনকারী এবং অন্যান্য অংশীজনের প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট করতে হবে যাতে এই রায়ের বাস্তবায়ন সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হয় ও কোটা ইস্যু কেন্দ্র করে নতুন করে কোনো সংকটের উদ্ভব না ঘটে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের পরিবর্তে বিভিন্ন পদ্ধতির বলপ্রয়োগ দ্বারা মোকাবিলা করতে চাওয়ার ফলে দেশের সর্বত্র শিক্ষার্থী এবং জনগণ ব্যাপক সংখ্যায় রাস্তায় নেমে আসে এবং এক সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণের ফলে শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং মেট্রোরেলসহ বহু সরকারি স্থাপনা, ভবন, যানবাহন ও বেসরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এসব ক্ষয়ক্ষতি যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা করেনি তার বড় প্রমাণ হলো, এই আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী মেট্রোরেল স্টেশনসহ কোনো স্থাপনা এবং যানবাহন হামলার শিকার হয়নি।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, দুঃখজনক যে, এত মৃত্যু এবং ধ্বংস সবই এড়ানো যেত যদি সরকার গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে কোটা সমস্যার নিরসনের পথ গ্রহণ করতো। সরকারের পক্ষে বলপ্রয়োগের ধারায় অগ্রসর হওয়া আরও বিয়োগান্তক ছিল এ কারণে যে, সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী কোটার বিষয়ে সরকারের অবস্থান আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান সমধর্মী ছিল। বর্তমানে সরকার শিক্ষার্থী এবং অন্যান্যদের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনায় একদিকে দুঃখপ্রকাশ করছে কিন্তু অন্যদিকে ‘ব্লক রেইডে’র মাধ্যমে কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের গণহারে গ্রেপ্তার এবং আটক করছে। এর ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং দুই শতাধিক মৃত্যুতে ইতিমধ্যে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তার উপশম আরও কঠিন হবে। সরকারকে বুঝতে হবে যে, নিপীড়নের মাধ্যমে প্রকৃত সমাধান ও সমর্থন অর্জন করা যায় না; সেটা করতে হয় জনসমক্ষে, নীতিনিষ্ঠ, এবং কল্যাণমূলক আচরণ দ্বারা।

এমএইচএন/পিএইচ