মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকায় নিয়মিত যাত্রীদের এখন ফিরতে হয়েছে সেই পুরোনো বাস সেবায়। বাদুড়ঝোলা থেকে শুরু করে বাসে চাড়তে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। অফিস টাইমে বাস স্টপেজে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত। এর ফলে মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রীরা এখন দুঃসময় পার করছেন।

গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রো লাইনের নিচের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ভাংচুর করে মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজী পাড়া স্টেশন। পরে বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল। কবে নাগাদ এই সেবা চালু হবে তা এখনও জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন আসাদ আবেদীন জয়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর পর থেকে অফিসের কাজে নিয়মিত মিরপুর-১০ স্টেশন থেকে সচিবালয় স্টেশনে আসা-যাওয়া করতাম। মেট্রোরেল চালুর আগে বাসে আমার গন্তব্যে পৌঁছতে অন্তত দেড় ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হতো। কিন্তু মেট্রোরেল চালুর পর সকাল সাড়ে ৯টায় মিরপুর-১০ স্টেশনে থাকলে এবং কোন একটি ট্রেন মিস হলেও ১০টার মধ্যে সচিবালয় স্টেশনে থাকতে পেরেছি। এখন মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আমাকে আবারও সকাল ৮টায় উঠে বাসের পেছনে দৌঁড়াতে হচ্ছে।

আরেক যাত্রী ইশরাত জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সেই সুবাদে মেট্রোরেল চালুর আগে নিয়মিত অফিসের স্টাফ বাসে যাতায়াত করতাম শেওড়াপাড়া থেকে। স্টাফ বাসে অফিসে আসার জন্য আমাকে অবশ্যই সাড়ে ৭টার সময় শেওড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে থাকতে হতো। তারপর অফিসে পৌছাতে কখনও ৯টা পর হয়ে যেত। কিন্তু যেদিন মেট্রোরেল সচিবালয় স্টেশনে প্রথম থামলো সেদিন সকালে স্টাফ বাসে অফিসে এসেছি দেড় ঘণ্টায় আর মেট্রোরেল বাসায় ফিরেছি মাত্র ১৭-১৮ মিনিটে। এরপর থেকে মেট্রোরেল চালু থাকলে আর কখনও স্টাফ বাসে অফিসে আসিনি।

তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল আমাদের সময় বাঁচিয়েছে। মেট্রোরেলের কল্যাণে অন্তত পরিবারকে সাধারণ সময়ের তুলনায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় বেশি দিতে পেরেছি। অন্তত এক ঘণ্টা বেশি ঘুমাতে পেরেছি। কিন্তু এখন মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আবার সময়ের দিক থেকে পিছিয়ে গেছি।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) গত ১৮ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অনিবার্য কারণবশত জননিরাপত্তার স্বার্থে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন থেকে সর্বশেষ মেট্রো ট্রেন আজ বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আজ আর কোনো মেট্রো ট্রেন চলাচল করবে না। আগের মতো মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। সম্মানিত যাত্রী সাধারণের সাময়িক অসুবিধার জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

এর ৬ দিন পর গত ২৪ জুলাই ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, চলতি সপ্তাহে মেট্রোরেল চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি নিজেও জানিনা মেট্রোরেল কবে চালু করতে পারবো। তাই এই বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্টেশন ২টি ঠিক করে চালু করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক যন্ত্রপাতিই মেরামতযোগ্য অবস্থায় নেই। এগুলো নতুন করে আমদানি করতে হবে। এর আগে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলেও এই দুটি স্টেশনে ট্রেনের বিরতি ও যাত্রী সুবিধা বন্ধ থাকবে।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় মেট্রো লাইনের নিচের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় দুবৃত্তরা। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই ট্রেন ছুটে যায়। পরে জননিরাপত্তার স্বার্থে ওই বিকাল সাড়ে ৫টার পর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কিন্তু পরদিন ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুবৃত্তরা। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওইদিন পল্লবী ও মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশনেও হামলা হয়।

মেট্রোরেলের ক্ষতি নিরূপণে অতিরিক্ত সচিব মো. জাকারিয়াকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এখনও পূর্ণাঙ্গ হিসাব শেষ করেননি। তবে প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতির অংক ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্মকর্তাদের ধারণা।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ যাত্রী যাতায়াত করত।

/এমএইচএন/এমএসএ