কোটা আন্দোলনে হতাহত-বলপ্রয়োগ
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তসহ ১১ দাবি বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের
কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ, নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রের ব্যবহার ও বলপ্রযোগসহ প্রতিটি হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি উত্থাপন করেছে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ।
গত কয়েকদিনে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘটনাবলিতে শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা, জুলুম ও নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ১১ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মিলিত হয়ে ১১ দফা দাবি পেশ করেন তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হক, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১১ দফা দাবি বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের
১. কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকারি মদদপুষ্ট অস্ত্রধারীদের গুলি এবং নির্মম আঘাতে নিহত সকল মৃত্যুর সঠিক, স্বচ্ছ তদন্ত হতে হবে এবং প্রকৃত দোষী, তা সে যতই উচ্চ পদাধিকারী বা কোন দলমতের হোক, সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. স্বাধীন, গ্রহণযোগ্য এবং বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থে প্রতিটি হতাহতের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রের ব্যবহার ও বল প্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হতে হবে। এই প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করতে হবে।
৩. ইতোমধ্যে সংগৃহীত ছবি, ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত সকল হন্তারক ও আক্রমণকারীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই ব্যাপারে কালবিলম্বের কোনও সুযোগ নেই।
৪. জাতির ইতিহাসে সংঘটিত এমন নজিরবিহীন হতাহতের শিকার সকল নিহত, আহত নাগরিকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকারকে অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।
৫. ১৪৭ জন নয়, সকল নিহত ও আহত নাগরিকের সম্মানে জাতির সহানুভূতি, সম্মান আর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় শোক ঘোষণা করতে হবে। এই শোক প্রকাশকে আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু করে আন্তরিক ও অর্থবহ করতে হবে।
৬. দায় মেনে নিয়ে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, ক্ষতিপূরণ আর পুনর্বাসনের পুরো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের চিত্র জাতির সামনে অনতিবিলম্বে তুলে ধরতে হবে।
৭. অবিলম্বে আটককৃত সকল শিক্ষার্থীর মুক্তি দিতে হবে এবং শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে এবং সেখানে অস্ত্রধারী ও প্রভাব বিস্তারের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
৮. তথাকথিত ডিবি হেফাজত থেকে সকল সমন্বয়কারী মুক্তি দিতে হবে। এমন জোরপূর্বক উঠিয়ে নেওয়া আর বেআইনি হেফাজতের ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং এর সাথে জড়িত সকলকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে।
৯. সরকারকে ভয় দেখানোর সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। গুলি করে আন্দোলন দমনের অসুস্থ মানসিকতার অবসান এখনি করতে হবে। স্বাভাবিক ও স্বস্তির পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কারফিউ ও সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, সাঁজোয়া যান সরিয়ে নিতে হবে, হেলিকপ্টারের পাহারা থামাতে হবে, ব্লক রেইড, গণগ্রেফতার, ছাত্র-অভিভাবক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। আমরা স্বাধীন দেশে মুক্ত পরিবেশে বসবাস করবো, কোন বদ্ধ, নিয়ন্ত্রিত, আতঙ্কের পরিবেশে নয়।
১০. অবাধ তথ্য প্রবাহে আরোপিত সকল বাধা দূর করতে হবে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পূর্ণ মাত্রায় খুলে দিতে হবে।
১১. সহিংসতা দমনের নামে বিরোধী মত দমন করা যাবে না। স্পষ্ট প্রমাণের মাধ্যমে সহিংসতার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জেইউ/পিএইচ