২১ জুলাই, রোববার বিকেল সাড়ে তিনটা। অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসার নিচে নামেন রাজধানীর কুড়িল এলাকার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ। গলি পেরিয়ে মূল সড়কে আসার আগেই হঠাৎ দেখেন সামনে থেকে কিছু লোক দৌড়ে আসছে। তা দেখেই রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ান পাশের দোকানে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই মূলসড়ক থেকে গলি লক্ষ্য করে শুরু হয় ফায়ারিং। কিংকর্তব্যবিমূঢ় শাকিল ভয় পেয়ে জীবন বাঁচাতে আবার বাসার দিকে দৌড় দেন। কিন্তু বিধি বাম। পেছন থেকে একটি বুলেট এসে লাগে বাম পায়ের হাঁটুর নিচে। বুলেটটি পেছন দিক দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। তারপর আর কিছুই মনে নেই। চোখ খুলে নিজেকে দেখতে পান হাসপাতালের বিছানায়।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) বিছানায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন তিনি। শাকিল জানান, পেশায় তিনি একজন ডেলিভারি বয়। গ্রামের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। মা আর দুইবোন নিয়েই তার সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিজের ভবিষ্যৎ আর পরিবারের সদস্যদের চিন্তায় করুণ অবস্থা তার। পায়ে অস্ত্রোপচারের পর এখনও শঙ্কামুক্ত হননি। কবে নাগাদ আবার আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন তারও নিশ্চয়তা নেই। 

শাকিল বলেন, আমি কোনো আন্দোলনে ছিলাম না। আমি চাকরি করি। কোনোরকমে সংসার চালানোর জন্য আমার সবরকম চেষ্টা থাকে। কিন্তু পুরো বিষয়টি আমার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হয়। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে আমার বড় বোন এসেছে। তিনিই (বোন) এখন আমার দেখাশোনা করছেন।

হাসপাতালে উপস্থিত শাকিলের ফুফাতো ভাই শাহীন হোসেন বলেন, আমার ভাই কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। একটি দোকানের ডেলিভারি বয় এবং সেলসম্যান হিসেবে কাজ করে পরিবারের খরচ বহন করে। এই পরিস্থিতিতে আমরা সবাই খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি। কবে নাগাদ পা ঠিক হবে জানি না। শুনেছি ওই দিনের ঘটনায় শুধু শাকিলই নয় বরং আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। যারা কেউই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন না। সবাই ছিলেন পথচারী।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) হাসপাতালের নার্স এবং নিরাপত্তাকর্মীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনও হতে হয়নি তাদের। এতো গুলিবিদ্ধ রোগী একসঙ্গে আগে কখনও দেখেননি। 

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক আনসার সদস্য বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দুই থেকে তিনদিন যে সংখ্যক রোগী এসেছে তা আমরা এর আগে কোনোদিন দেখিনি। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ রোগীর সংখ্যাই বেশি ছিল। হাসপাতালের সবাই আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। হাসপাতালে এলেই কে আন্দোলনকারী আর কে সরকারবিরোধী সেটি বিবেচনা করা হয় না। বরং সবার সেবা নিশ্চিতের জন্যই সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরএইচটি/জেডএস