বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচজন সমন্বয়ককে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে জিম্মি করে বিবৃতি দেওয়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২৯) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে অবস্থান নিয়ে এসব অভিযোগ করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের রাতের আধারে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হতাহত করা হয়েছে। অনেককে পঙ্গু করা হয়েছে। পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে জিম্মি করে বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছে। তাদেরকে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করার কথা বলানো হয়েছে। আমরা শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে পারি না। আমাদের সহকর্মীদের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

আন্দোলনকারী অপর আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ডিবি অফিস থেকে আসা যে কোনো ধরনের বিবৃতি শিক্ষার্থী সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ৯ দফা দাবি আদায় না হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করা হচ্ছে। দিনের বেলায় নাটক করে রাতের বেলায় মেসে-মেসে তল্লাশি, আটক-প্রেপ্তার করছে। বিভিন্ন মোড়ে-মোড়ে ছাত্রদের হেনস্তা করছে, মোবাইল চেক করছে, এই ক্ষমতা তাদের কে দিয়েছে? কেন তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে?

অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারসহ বিজিপি-সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি হলো-

১. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে জাতির জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে,

২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধ উপায়ে ব্যবহার করে ছাত্র হত্যা করার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মন্ত্রী পরিষদ, দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে,

৩. ঢাকাসহ যেসব জায়গায় শহীদ হয়েছে, সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করতে হবে,

৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে,

৫. যে পুলিশ সদস্যরা গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যেসব সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করেছে ও হামলার নির্দেশ দিয়েছে, তাদের আটক করে হত্যা মামলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার দেখাতে হবে,

৬. দেশজুড়ে যেসব শিক্ষার্থী এবং নাগরিক শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে,

৭. ঢাবি, জাবি, চবি, রাবিসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনসহ দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদকে কার্যকর করতে হবে,

৮. অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে এবং

৯. যেসব শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের কোনো ধরনের একাডেমিক-প্রশাসনিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এসআই/এমজে