বগুড়ার যুবদল নেতা নুরে আলম সিদ্দিকি পিটন যুক্তরাজ্য থেকে নির্দেশনা পান পুলিশ মারলে ১০ হাজার এবং ছাত্রলীগ মারলে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এই ঘোষণার পর মাঠে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয় নুরে আলম সিদ্দিকির দুলাভাই মো. আব্দুল আজিজ ওরফে সুলতানকে।

সুলতানকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

ডিবি বলছে, গ্রেপ্তার আব্দুল আজিজ ছাত্রদের মিছিলের ভেতর টাকার বিনিময়ে টোকাই ও ছিন্নমূল শ্রেণির লোকদের ঢুকিয়ে দিয়ে দেশব্যাপী হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তার এ কাজে সহায়তা করে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডাররা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্য গ্রেপ্তার আসামি মো. আব্দুল আজিজ সুলতান টোকাই ও ছিন্নমূল শ্রেণির লোকদের দিয়ে একজন ছাত্রলীগকে মারলে ৫ হাজার টাকা এবং একজন পুলিশ সদস্য মারলে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য তিনি জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডারদেরও নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার আসামির প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় রাজধানীর উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

তিনি বলেন, তারা ভেবেছিল পুলিশের যদি মনোবল ভেঙে দেওয়া যায় তাহলে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির যে ষড়যন্ত্র তা সফল হবে। সেই মানসিকতা নিয়েই গত বছরের ২৮ অক্টোবরও পুলিশের ওপর হামলা করেছিল। সে সময় একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ হাসপাতাল ও প্রধান বিচারপতির বাস ভবন ভাঙচুর করা হয়। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রটি আবারও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন-হামলা ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রেখেছে। এইটা কি কোনো সভ্য দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব?

তিনি বলেন, এবার যারা আমাদের তিন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে তাদের নাম-পরিচয় পেয়েছি। তাদের যত দ্রুত সম্ভব ধরে এনে আইনের আওতায় দাঁড় করাবই। পুলিশ ও ছাত্রলীগ মারলে যারা টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। যারা ঢাকা শহরকে অকার্যকর করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল ইসলাম নিরব, এস এম জাহাঙ্গীর, রফিকুল ইসলাম মজনু ও আমিনুল ইসলামসহ অসংখ্য জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মী আমাদের কাছে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তাদের মোবাইল থেকে অনেক মেসেজ পেয়েছি। যারা দেশের বাইরে থেকে তাদের নির্দেশনা দিয়েছে যে, ‘নতুন কমিটির দায়িত্ব তোমাদের দেওয়া হয়েছে, যদি নির্দেশনা না মানো তাহলে তোমাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।’

ডিবি প্রধান বলেন, শুধু তাই নয়, ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় ও পরবর্তী সময়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, রেল লাইনে আগুন দিয়েছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও পুলিশকে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে সেসব লোকগুলোকে বর্তমানে বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিবি ও থানা পুলিশ ঢাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অভিযান পরিচালনা করছি। যারা সরকারি ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে ও পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আবার এটাও বলে রাখি, কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে হারুন বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য যদি সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে এমন সংবাদ পান তবে আমাদের জানাবেন।

এমএসি/এসকেডি