কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। আর এতে করে চরম বিপাকে পড়েন বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার সেবা গ্রহণকারীরা। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় মিটার রিচার্জ করতে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

মূলত প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় মোবাইলভিত্তিক ব্যাংকিং অ্যাপ তথা বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় ইত্যাদি। সাধারণত অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসে বিল প্রদানের কাজটি করা যায়। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পর অ্যাপভিত্তিক সেবাটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাপস ছাড়া ডায়াল-ইনের মাধ্যমেও রিচার্জের কাজটি সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু অনেকের ফোনে যথেষ্ট টাকা না থাকায় ছুটতে হয় রিচার্জের দোকানে।

ইন্টারনেটসেবা বন্ধ ও কারফিউয়ের ফলে রিচার্জের দোকানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় গ্রাহকের চাপ। ফলে অধিকাংশ দোকানেই দ্রুততম সময়ে টাকা শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া ব্যাংকিং অ্যাপের এজেন্টরাও টাকা নিয়ে দোকানে আসতে পারছিলেন না। ফলে চূড়ান্ত আকারে পৌঁছায় ভোগান্তির পরিমাণ।

মোহাম্মদপুরে বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহজাহান খান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার মিটারের টাকা শেষ হয়ে যায়। নেট না থাকায় রিচার্জ করতে দোকানে যাই। কিন্তু এলাকার কোনো দোকানির অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করার মতো টাকা নেই। কখন টাকা আসবে, কারফিউয়ের কারণে সে নিশ্চয়তাও তারা দিতে পারছিলেন না।

তিনি বলেন, তখন শুধুমাত্র নগদ আর রকেটে রিচার্জ করা যাচ্ছিল। বিকাশ থেকে রিচার্জ করা যাচ্ছিল না। পরে একজনের থেকে নগদে টাকা ধার করে ডায়াল-ইনের মাধ্যমে মিটার রিচার্জ করি।

শ্যামলীর বাসিন্দা পাভেল হোসেন বলেন, শুক্রবার সকালে আমার মিটারের লিমিট শেষ হয়। পরে রিচার্জের জন্য দোকানে গেলে বলা হয় টাকা নেই। কখন আসবে সেটাও শিওর না। পরে বিকেলে কারফিউ শিথিলের পর এজেন্টরা টাকা নিয়ে এলে রিচার্জ করা সম্ভব হয়।

ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার গ্রাহকের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখের কাছাকাছি। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ার পর বিপুল অংশের গ্রাহক ভোগান্তির মুখে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ার পর গ্রাহকদের মিটার রিচার্জ করতে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে এ ভোগান্তি নিরসনে আমরা এলাকাভিত্তিক অফিসগুলো ২৪ ঘণ্টার জন্য ওপেন করে দিয়েছি। সেখানে গ্রাহকরা কার্ড ও টাকা নিয়ে গেলে ডিপিডিসির কর্মীরা রিচার্জ করে দিচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ডিপিডিসির বুথ খোলা হয়েছে। সেখানে গিয়েও গ্রাহকরা মিটার রিচার্জ করতে পারবেন। গত দুই দিন (শুক্র-শনি) গ্রাহকের প্রচুর চাপ ছিল, তবে এখন তা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

অপরদিকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) মুখপাত্র মলয় দেবনাথ বলেন, মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ভোগান্তি নিরসনে আমরা একটি লোন সিস্টেম চালু করেছি। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা নিকটস্থ ডেসকো অফিস থেকে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা লোন নিতে পারবেন, তা পরবর্তীতে সমন্বয় করে কেটে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক গ্রাহক এ সুবিধা নিয়েছেন। অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রিচার্জ করতে পেরেছেন, তবে যারা পারেননি তারা লোন নেওয়ার মাধ্যমে রিচার্জ করতে পারবেন।

ওএফএ/এমজে