কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিটিভি ভবন, মেট্রোরেলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় জড়িত গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. তারেক রহমানসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

রাজধানীর মিরপুর ও বাড্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্মা সদস্য সচিব মো. তারেক রহমান (৩১) ও তার সহযোগী মো. সজল মিয়া (২৪), আল ফয়সাল রকি (২৭) ও মো. আরিফুল ইসলাম (৩০)।

র‌্যাব জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হামলা, নাশকতা ও অগ্নিসংযোগে গ্রেপ্তাররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্রের নির্দেশনায় তারা এই হামলা ও নাশকতায় অংশ নেয়। 

গ্রেপ্তাররা মূলত গ্রেপ্তার তারেকের নির্দেশনা ও নেতৃত্বে রাজধানীর বিটিভি ভবনসহ, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনসহ রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুরে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করে। দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কুচক্রী মহলের সঙ্গে তারেক নিয়মিত যোগাযোগ করতেন।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস এসব কথা বলেন।

মুনীম ফেরদৌস বলেন, গত ৬ জুন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান এই আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ ও নাশকতার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাব সড়ক ও আকাশ পথে টহল কার্যক্রম পরিচালনাসহ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

চলমান নাশকতা ও সহিংসতায় র‌্যাব হেলিকপ্টার টহলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে আটকেপড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ জনগণসহ প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়।

এছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুস্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীদের সহিংস হামলা ও আক্রমণ প্রতিহত করতে গেলে দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীদের হামলায় র‌্যাবের একজন সদস্য গুরুতর আহতসহ প্রায় শতাধিক সদস্য আহত হয় এবং ১৩টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২২ জুলাই র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিটিভি ভবন, মেট্রোরেলসহ রাজধানীর রামপুরা, মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় জড়িত গণঅধিকার পরিষদের যুগ্মা সদস্য সচিব মো. তারেক রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২টি শর্টগানের খালি খোসা, ২টি ল্যাপটপ, ৩টি সিপিইউ, ১টি হার্ড ডিক্স, ১টি মডেম, ১টি এটিএমকার্ড, ৪টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১১ হাজার ৮৮৭ টাকা। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হামলা, নাশকতা ও অগ্নিসংযোগে গ্রেপ্তাররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্রের নির্দেশনায় তারা এই হামলা ও নাশকতায় অংশ নেয়। গ্রেপ্তাররা মূলত গ্রেপ্তার তারেকের নির্দেশনা ও নেতৃত্বে রাজধানীর বিটিভি ভবনসহ, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনসহ রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুরে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করে। 

গ্রেপ্তার কে এই তারেক রহমান?

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরও বলেন, গ্রেপ্তার তারেক রহমান কুমিল্লার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। সে মৌসুমি ফলের ব্যবসায়ী। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠিত হলে তাকে যুগ্ম সদস্য সচিব নির্বাচিত করা হয়। সে যুব অধিকার পরিষদের সঙ্গেও যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে গণ অধিকার পরিষদ গঠন হলে তাকে সংগঠনটির যুগ্ম সদস্য সচিব পদ প্রদান করা হয়। ২০২১ সালে গণ অধিকার পরিষদ দুই ভাগে বিভক্ত হলে সে একটি অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তারেক রহমান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতো। হাইকোর্ট কর্তৃক কোটা বাতিল বিষয়ক রায়ের পর ২০২৪ সালের জুন মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে তারেক রহমান গণ অধিকার পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং আন্দোলনকে উসকে দিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার সমমনাদের নিয়ে বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার নাম করে তারেক রহমান দেশের জনসাধারণ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন।

লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আরও বলেন, দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কুচক্রী মহলের সঙ্গে তারেক নিয়মিত যোগাযোগ করতো। এছাড়াও সে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন ইউটিউব ও ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তীতে সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বিভিন্ন গুজবসহ বিভিন্ন কার্যকলাপ পরিচালনা করতো। সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলেও সে রাষ্ট্রবিরোধী গোষ্ঠীর নির্দেশনায় সরকার পতনের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে বিটিভি ভবনসহ রামপুরা ও বাড্ডায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

গ্রেপ্তার সজল সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরার একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। সে অনলাইনে মধুর ব্যবসা করতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার তারেকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদে যুক্ত হয় এবং মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদকপ্রাপ্ত হয়। গ্রেপ্তার তারেকের নির্দেশনায় সজল কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন ভবনে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেয় এবং বিটিভি ভবনসহ রামপুরা ও বাড্ডার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণ করে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুটি মামলা রয়েছে এবং ওই মামলায় সে এক বছর কারাভোগ করেছে। 

গ্রেপ্তার ফয়সাল সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ফয়সাল রাজধানীর মহানগর প্রজেক্টের একটি কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি একটি পার্ট টাইম চাকরি করতো। ২০২১ সালে সে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদে যুক্ত হলে গ্রেপ্তার তারেকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০২২ সালে সে সংগঠনের মহানগর উত্তরের সভাপতি পদ প্রাপ্ত হয়। সে গ্রেপ্তার তারেকের নির্দেশনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালায়। সে রামপুরা এবং বাড্ডায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়। 

গ্রেপ্তার কে এই আরিফুল

লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস গ্রেপ্তার আরিফুল স্থানীয় একটি স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে সে রাজধানীর লালমাটিয়া মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করেন। দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রেপ্তার তারেকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গ্রেফতার তারেকের নির্দেশনায় আরিফুল মিরপুর-১০ কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়।

জেইউ/এমএ