কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত ১৬ জুলাই সহিংসতায় ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বরাত দিয়ে তথ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া এক বার্তায় এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। যদিও দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছিল। 
 
বার্তায় বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় ৬ জন নিহত হওয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে এই কমিশনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। কমিশন আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।’

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বক্তব্যকে ঘিরে গত রোববার মধ্যরাত থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রসমাজ। এরপর সোম, মঙ্গল ও বুধবার টানা তিনদিন সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে। আন্দোলন দমাতে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগও মাঠে নামে। এতে সোমবার ও মঙ্গলবার সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মঙ্গলবার একদিনেই ৩ শিক্ষার্থীসহ ৬ জন মারা যান। এদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে পুলিশ নিরস্ত্র অবস্থায় সামনাসামনি গুলি করে হত্যা করে। এসব হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবারও আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল ছিল রাজপথ। গতকাল সন্ধ্যায় এ নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই ভাষণেও সমস্যার কোনো সমাধান দেওয়া হয়নি দাবি করে এবং প্রতিটি হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনকারীরা আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

কোটা নিয়ে জটিলতা কী?

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার প্রচলন ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫৬ জন নিয়োগ দেওয়া হতো কোটাধারী চাকরিপ্রার্থীদের মধ্য থেকে। এটাকে ‘বৈষম্য’ ধরে নিয়ে এর নিরসনে বিভিন্ন সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ওই বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিরক্ত হয়ে’ একদিন সংসদে ঘোষণা করেন, যেহেতু কেউ কোটা চায় না সুতরাং এখন থেকে আর কোনো কোটা থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর ওই বছলই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিসিএসসহ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ছাড়াই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে আসছে। তবে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতোই কোটা পদ্ধতি চালু আছে।

সম্প্রতি, কয়েকজন মুক্তযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে প্রথম ও ২য় শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার আবারও প্রচলন চান। হাইকোর্ট ওই রিট ‘অ্যাবসলুট’ ঘোষণা করেন এবং ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে জারি করা সরকারি পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে গেছে এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের জন্য ‘স্ট্যাটাস কো’ বা স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করার পর থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের ভয়, সরকার আদালতকে ব্যবহার করে আবারও কোটা পদ্ধতি চালু করতে চায়। প্রথমে তারা দাবি করেন ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে অর্থাৎ কোনো ধরনের কোটা থাক সেটি তারা চান না। পরে তারা অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে কোটার যৌক্তিক ও স্থায়ী সংস্কার চান। সেক্ষেত্রে তারা মূলত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রাখার পক্ষে এবং সেটি সর্বোচ্চ ৫% রাখার দাবি তাদের। এই সংস্কার এখন তারা ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও চাচ্ছেন। তারা হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগ নয়, সরকারের কাছে কোটা সংস্কার করে নতুন পরিপত্র জারি বা সংসদে আইন পাসের দাবি করছেন।

এসএম