রাত সোয়া ৯টার দিকে সড়কে তখন যানজট। এমন সময়ে একের পর এক চালক-হেলপারকে ছুরিকাহত করেই চলেছেন এক যুবক। যানজটে আটকে ছিল গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি মাইক্রোবাসও। ওই মাইক্রোবাসও নক করেন যুবক। দরজা না খোলায় পাশের একটি পিকআপের দরজায় নক করেন তিনি। দরজা খুলতেই ওপরে উঠে সরাসরি চালকের বুকে ছুরি ধরেন তিনি। 

বিষয়টি লক্ষ্য করছিলেন পাশের মাইক্রোবাসে থাকা ডিবি কর্মকর্তারা। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে ছুরিকাঘাত করার আগেই ফিল্মি স্টাইলে ঝাপটে যুবককে ধরে ফেলেন তারা। 

যদিও এ ঘটনার কয়েক মিনিট আগেই আরও দুজনকে ছুরিকাঘাত করে আসেন অভিযুক্ত যুবক। পরবর্তী সময় তারা দুজনেই মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত সোয়া ৯টার দিকে ভীতিকর এ ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকায় অক্সিজেন-নাজিরহাট সড়কে।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, পিকআপ চালক বুলু বড়ুয়া (৪৫) ও একটি বাসের হেলপার মো. মানিক (৪০)। তাদের মধ্যে বুলু মঙ্গলবার রাতেই মারা যান। আর মানিক মারা যান বুধবার সকালে। 

স্থানীয়রা জানান, নিহত বুলু বড়ুয়া ফটিকছড়ির পাইন্দন এলাকার হিমাংশু বড়ুয়ার ছেলে। মানিক হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের ওয়াহিদ ফকিরের বাড়ির মৃত শাহা আলমের ছেলে।

পুলিশ জানায়, আটক আরিফ হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া এলাকার মো. কামালের ছেলে। পেশায় অটোরিকশাচালক আরিফ কী কারণে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন সুস্পষ্ট করে বলছেন না। শুধু জানিয়েছেন ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে এক বাসচালকের ঝগড়া হয়েছিল। 

ঘটনার সময়ে প্রত্যক্ষদর্শী চট্টগ্রাম জেলা ডিবির পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, আমরা হাটহাজারী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটি শেষে ফিরছিলাম। আমানবাজার এলাকায় পৌঁছালে একটু যানজটে পড়ি। রাত তখন সোয়া ৯টা। হঠাৎ আমাদের বহনকারী মাইক্রোবাসে এক যুবক নক করে। আমরা দরজা খুলিনি। তবে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমাদের গাড়ির পাশে থাকা একটি পিকআপের চালকের পাশের দরজায় নক করেন তিনি। খুলতেই তিনি তার বুকের ওপর ছুরি ধরেন। ততক্ষণে আমাদের ডিবির টিম নেমে তাকে ঝাপটে ফেলে। তারপর আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়।

তিনি বলেন, তখন আমরা জানতে পারি এই যুবক আরও দুজনকে ছুরিকাহত করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে আমরা হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে হাটহাজারী থানায় ফোন দেই। আহতদের হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করি। একই সঙ্গে আটক যুবককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে এক বাসচালকের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। এজন্য যানজটে তিনি যাকে পাচ্ছেন তাকেই ছুরিকাহত করছেন। আমরা ঘটনাস্থলে না থাকলে আর কয়েকজন হতাহত হত। ঘটনার সময় অন্ধকার ও যানজট হওয়ায় কেই ভালোভাবে বুঝতে পারছিলেন না।

এদিকে, আচমকা সড়কে এমন ভীতিকর ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে বন্ধ থাকে হাটহাজারী-নিউমার্কেট রুটের দ্রুতযান সার্ভিসের বাস চলাচল। 

চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমানবাজার এলাকায় অভিযুক্ত অটোরিকশাচালক প্রথম মালবাহী পিকআপটিকে আটকিয়ে চালককে ছুরিকাঘাত করে। এরপর দ্রুতযান সার্ভিসের একটি বাসের হেলপারকেও ছুরিকাঘাত করে। ঘটনাস্থলের পাশেই একটি গোয়েন্দা পুলিশের গাড়ি ছিল। আরেক চালককে ছুরি মারার সময় ডিবি কর্মকর্তারা নেমে অভিযুক্ত অটোরিকশাচালককে আটক করে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুবিচার চাই।

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমান বাজার এলাকায় ঘটনাস্থলের পাশেই ডিবির গাড়ি ছিল। অভিযুক্ত যুবক না চিনে ডিবির গাড়িতে হামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দরজা না খোলায় তিনি পাশের গাড়ির চালককে হামলার সময় জীবন বাজি রেখে ডিবি কর্মকর্তারা তাকে আটক করেন। ডিবির টিম সেখানে না থাকলে ঘটনা আরও বড় হত। এ ঘটনায় হাটহাজারী থানায় অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এমআর/কেএ