সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে আহত হয়েছেন।

পরে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচিকে ঘিরে টিএসসি এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড আর গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে আন্দোলন করা ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের অবস্থান-মিছিলে পুলিশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ‘প্রটেকশন’ দিতে দেখা গেছে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেখানে বহিরাগত সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হয়ে কাজ করছেন।

বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল চারটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা শেষে কফিন নিয়ে টিএসসি এলাকায় আসতে চাইলে গুলি-টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর শাহবাগ, বাটা সিগনালসহ বিভিন্ন এলাকায় লাটি, স্টাম্প, রড, বাঁশসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করলেও তাদের চতুর্দিকে পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি টিএসসি এলাকা থেকে সাংবাদিক ছাড়া আর কাউকেই শাহবাগ এলাকার দিকে আসতে দিচ্ছে না পুলিশ। এসব এলাকায় পুলিশ চুপচাপ থাকলেও ভিসি চত্বরসহ টিএসসি এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ।

এদিকে, বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ৬টি কফিন সামনে রেখে গায়েবানা জানাজা আদায় করে শিক্ষার্থীরা। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কফিন নিয়ে টিএসসি এলাকায় রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করার কথা। তবে বেগম রোকেয়া হল পর্যন্ত আসা মাত্রই শিক্ষার্থীদের ওপর এলোপাতাড়ি সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে পুলিশ। এসময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে দৈনিক কালবেলার মোজো রিপোর্টার আকরাম হোসেন, এসএ টিভির রহমউল্লাহসহ বিজনেস বাংলাদেশ, আমার সংবাদে কর্মরত আরও বেশ ক’জন সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন এখন একটি দলের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। এফ রহমান হলের রাফিউর রহমান নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা জানাজা শেষ করে টিএসসিতে এসেই কর্মসূচি শেষ করতাম। কিন্তু সেখানে পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে কিন্তু ঠিকই আরেকটি পক্ষকে তারা নিরাপত্তা দিচ্ছে। এই পুলিশ কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পিটাতে এসেছে, নাকি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে? এই পুলিশ তো আমাদের সাধারণ মানুষ নয়, তারা ক্ষমতাসীনদের সেবাদাস।

আবদুল্লাহ আল মামুন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছেন, আপনাদের কি ভাই-বোন নেই? এভাবে কেন আমাদের ওপর আক্রমণ করা হলো? আমরা কেন ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবো? এটা আমাদের ক্যাম্পাস, আপনারা এখান থেকে বের হয়ে যাবেন।

তিনি আরও বলেন, আমি এখন হলে যাবো। ৬টার মধ্যে আমাদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে, কিন্তু আমাদের হলেই ঢুকতে দিচ্ছে না। আমাদের প্রত্যেকের আইডি কার্ড আছে, তারপরও নাকি আমরা যেতে পারবো না। এটা কিসের স্বাধীনতা? আমরা তো শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করেছি।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেন বাঁধা দেওয়া হয়েছে—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলের স্লিপার খুলতে পারে না, মেট্রো স্টেশন ভাঙচুর করতে পারে না, হাইওয়েও আটকাতে পারে না। বিশেষ একটি মহল তাদের ওপর ভর করে এমন কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা একেরপর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, আর পুলিশ চোখ বুজে থাকবে এমনটা হতে পারে না।

একদিকে পুলিশের প্রটেকশন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকশন কেন— এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এসময় আন্দোলনকারীদের অভিযোগ কোটাধারী পুলিশ সদস্যরাই আন্দোলনকে উসকে দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে, এবিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।

টিআই/এসএম