সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য ও টিএসসিতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে এবং চারপাশে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা।

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ২টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে মঙ্গলবার নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজা পড়ার কথা ছিল। তবে পুলিশ ও বিজিবি আগে থেকেই সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। ফলে সেখানে জানাজা পড়া সম্ভব হয়নি।

বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে নিউমার্কেট এলাকা থেকে একটি কফিনসহ আন্দোলনকারীদের মিছিল আসে। এ সময় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে ভিসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা পড়েন তারা।

জানাজার পর কফিন ধরে আন্দোলনকারীরা শপথ নেন, তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।

পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ক্যাম্পাসে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে শাহবাগ মোড়ে লাঠিসোটা নিয়ে জড়ো হয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়য় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখানে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয় সেজন্য পুলিশ কাজ করছে।

এদিকে র‌্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি তারা ক্যাম্পাস না ছাড়ে, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের যে নির্দেশনা দেবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে র‌্যাব। শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। তবে তাদের অনুভূতিকে যদি তৃতীয় পক্ষ কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে চায়, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন গতকাল মঙ্গলবার বেশ সহিংস রূপ নেয়। এদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ৬ জন মারা যান। আহত হন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

এ অবস্থায় মঙ্গলবারই সারা দেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাস ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। হলগুলোর ভেতরে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকেই আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলন এখনো চলছে। আজ বুধবারও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ ৬ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এমএসি/এমএম/এসকেডি