কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কখন হল ছাড়তে হবে
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্ত আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে ইউজিসির ওই ঘোষণার পর বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেটের সভায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে কখন শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে, সেই সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এর আর্টিকেল ২৪(এল) ধারার ক্ষমতাবলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ছাত্রী ও রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ। তিনি বলেন, আজকের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদেরকে সন্ধ্যা ৬টা এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদেরকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বুধবার বিকেল ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। একইসঙ্গে বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বুধবার বিকেলে ছাত্র এবং বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মঈনুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীদের বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৪টার মধ্যে হলত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৩টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
কুয়েট
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সব শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ছাত্রদের এবং বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যবিপ্রবি
চলমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাজনিত কারণে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ছেলেদেরকে বিকেল ৪টার মধ্যে এবং মেয়েদেরকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক হলত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সকালে যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে যবিপ্রবির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ১০২তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের অনেকে ভার্চুয়ালি এবং সশরীরে অংশ নেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সব শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. অলিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিন্ডিকেটের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ১৮ জুলাই দুপুর ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন মঙ্গলবার বেশ সহিংস রূপ নেয়। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সোমবারও দুপুর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৫টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আব্দুল মঈন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমরাও সিন্ডিকেট সভা ডেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হল থেকে আজ বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সকল শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ছাত্রদের এবং বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৯২তম জরুরি সভায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা ডিভিশনের সহকারী পরিচালক মনোজ কুমার মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জেডএস/এমজেইউ