আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূণ পরিবেশে নানা-কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হবে।

কারবালার ‘শোকাবহ এবং হৃদয় বিদারক ঘটনাবহুল’ এই দিনটি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে মুসলিম বিশ্বে এ দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে বুধবার সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যম এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।

পবিত্র আশুরা ১৪৪৬ হিজরি উপলক্ষ্যে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে আজ বাদ যোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ও তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব শাইখুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ ও আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মো. ইমরান নূরুদ্দীন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকার। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, পবিত্র আশুরা সমগ্র মুসলিম উম্মা’র জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকের দিন।

রাষ্ট্রপতি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) সহ কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারী সব শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় হিজরি ৬১ সনের ১০ মহরম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহিদ হন। ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তাদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরদিন সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে চলার। 

পবিত্র আশুরার মহান শিক্ষা সবার জীবনে প্রতিফলিত হোক-এ প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপতি।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। সব ধর্মই হানাহানি, হিংসা, দ্বেষ ও বিভেদ ভুলে মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করে।

তিনি পবিত্র আশুরার এই দিনে সাম্য, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মা’র ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ইসলামের ইতিহাসে এই মর্মন্তুদ বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও হিজরি সালের মহরম মাসের ১০ তারিখ নানা কারণে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ।

সরকার প্রধান বলেন, বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র আশুরার দিনে রোজা রাখা সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করতেন। এই দিনে তিনি নিজে রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের রোজা রাখার পরামর্শ দিতেন। মহান আল্লাহ এই দিনে সমস্ত পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র আশুরার দিনে অনেক নবী, রাসুল ও আল্লাহ’র প্রিয় বান্দাগণ তার নৈকট্য ও সাহায্য লাভ করে কঠিন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। সে হিসেবে, আমি বিশ্বাস করি, এ দিনে বিশেষ নেক আমল মানব জাতির জন্য অনেক কল্যাণ বয়ে আনবে।

তিনি বলেন, আসুন আমরা যে যার অবস্থান থেকে কল্যাণকর কাজে অংশ নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ ‘সোনার বাংলাদেশ’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে নিবেদিত হই।

এতে তিনি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ দেশে ও প্রবাসে পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সব অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

এনএম/কেএ