গত কয়েকদিন ধরেই কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল সারাদেশ। এক দফা এক দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা। যেকোনো মূল্যেই কোটা সংস্কার চান তারা। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যখন সারা দেশ উত্তাল, তখন আইনজীবীরা আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তাদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। 

এই বিষয়ে ঢাকা জজকোর্টের অ্যাডভোকেট মো. রিয়াজুর রহমান রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে যদি কোনও শিক্ষার্থী আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন, তাহলে সেই শিক্ষার্থীদের জামিনের জন্য আমি আইনি সহায়তা দেব। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোনও ধরনের ফি দেওয়া লাগবে না।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের জামিনের জন্য আমার ফোন নম্বরে ০১৯৮৬৮৭৯৩০৫ যোগাযোগ করতে পারবেন। ঢাকায় কেউ গ্রেপ্তার হলে আমাকে জানাতে হবে। ঢাকা জজকোর্ট থেকে আমি তাদের জন্য আইনি লড়াই করবো। তাদের জন্য আদালতের কাছে জামিন চাইবো। এক্ষেত্রে কোনও ফি নেব না।

অ্যাডভোকেট মো. রিয়াজুর রহমান রায়হান বলেন, রাস্তায় গিয়ে আন্দোলন করতে না পারি, আইনি সহায়তাটুকু তো করতে পারি। আমার এই পদক্ষেপে অন্যান্যরাও সাহস পাবেন। 

এ ছাড়া কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চলমান আন্দোলনে আমার কোনো ভাই-বোন যদি গ্রেপ্তার হয় আমাকে জানাবেন। আমি বিনামূল্যে জামিন/ যেকোনো ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়ার  সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। প্রয়োজনে 01687768786 নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আইনগত সহায়তার জন্য একটি আইনি সহায়তা টিমও গঠন করা হয়েছে। 

আইনি সহায়তা টিম
১.অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক, মোবাইল নম্বর : ০১৬১১-১৯৫২৭৫১ ২.অ্যাডভোকেট মো. শিব্বির আহমেদ মোবাইল নম্বর : ০১৭৬১-৯৭৭৯৩৫
৩.অ্যাডভোকেট আবু তালহা মোবাইল নম্বর: ০১৭৮৮-৫৩৩৫৪৪ ৪.অ্যাডভোকেট তাওহীদুজ্জামান মোবাইল নম্বর: ০১৭০৬-২৫৬৮৮৬ ৫.অ্যাডভোকেট তানজিমুল বারী মোবাইল নম্বর: ০১৬১১-৬৩৫৩৭৩ ৬.অ্যাডভোকেট মো. সাদিউল ইসলাম রিদয় মোবাইল নম্বর: ০১৯১১-০৮৫২৫২ 
৭.অ্যাডভোকেট জায়েদ বিন নাসের মোবাইল নম্বর: ০১৫৫৫-১১১৬৬৬
৮.অ্যাডভোকেট রাইসুল আমিন মোবাইল নম্বর: ০১৮৯১-৯১৯৫০৯ ৯.অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাইমিন মোবাইল নম্বর: ০১৫২১-৪৩০৫৭২ ১০.অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসাইন পাপ্পু, মোবাইল নম্বর: ০১৬২২-৭২৭০২৬।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এমআইকে/এনএফ