বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে রেলওয়ের ঢাকা লোকোশেডের টার্ন-টেবিল / ছবি: সংগৃহীত

বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা লোকোশেডের টার্ন-টেবিল। এতে দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় আসা ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন না ঘুরিয়ে উল্টোভাবেই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

গত শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর থেকে ঢাকায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। চলে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা। এতে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় দীর্ঘসময়ের জন্য জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওইদিন ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে মোট ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপর গত দুই দিনেও দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে।

বৃষ্টির পানি জমে ডুবে গেছে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে থাকা লোকোশেডের টার্ন-টেবিল। সেই টার্ন-টেবিলের পানি এখনো নিষ্কাশন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় আসা ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন ঘোরানো সম্ভব হচ্ছে না

টানা ৩ দিনের বৃষ্টির পানি জমে ডুবে গেছে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে থাকা লোকোশেডের টার্ন-টেবিল। সেই টার্ন-টেবিলের পানি এখনো নিষ্কাশন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় আসা ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন ঘোরানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে ইঞ্জিনের পেছনের অংশে বসেই ট্রেন চালাতে হচ্ছে লোকোমাস্টারদের।

এমন দুরবস্থার কথা জানিয়ে গত শুক্রবার ঢাকা লোকোশেডে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকার টার্ন-টেবিল দীর্ঘদিন মেরামত শেষে গত ৭ এপ্রিল থেকে সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনার জন্য অস্থায়ীভাবে ফিটিং দেওয়া হয়। টেবিলটির সাইড রেলিং, স্থায়ী ডেড-ইন্ড সাফার ও পাম্প স্থাপনসহ বেশ কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। টার্ন-টেবিলে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ার ফলে আজ (শুক্রবার) থেকে টেবিলটিতে ইঞ্জিন ঘোরানো যাচ্ছে না। ফলে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। দ্রুত টার্ন-টেবিলের পানি নিষ্কাশনসহ প্রয়োজনীয় মেরামত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা গেল। বিষয়টি অতীব জরুরি।’

বিষয়টি নিয়ে একাধিক লোকোমাস্টার ঢাকা পোস্টকে জানান, যেদিন বৃষ্টির পানি জমে টার্ন-টেবিল বন্ধ হয়ে যায় সেদিনই বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আজ ৩ দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন করা হয়নি। গত ৩ দিন যাবত ঢাকায় যতগুলো ট্রেন এসেছে, সবক’টি ট্রেনের ইঞ্জিনই উল্টোভাবে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে গিয়েছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

তারা জানান, ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন ছাড়া বাকি সিরিজের ইঞ্জিনগুলোতে ওয়াইপার (গাড়ির সামনের জানালা থেকে পানি অপসারণের মেশিন) নেই। ফলে ভারী বৃষ্টির মধ্যে ইঞ্জিন ক্যাবের জানালা দিয়ে মাথা বের করে সামনে দেখতে হয় অথবা সামনের ঘোলা কাচের ভেতর দিয়ে যতটুকু দেখা যায়, ততটুকুতে সন্তুষ্ট থেকে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। এতে ট্রেন পরিচালনায় গতি কমেছে। বিষয়টি বারবার বললেও কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে লোকোমাস্টারদের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার টার্ন-টেবিল গত ৩ দিন যাবত ঘুরছে না। ফলে লোকোমাস্টারদের ইঞ্জিনের পেছনের অংশে বসে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। এতে সামনের অনেক কিছুই দেখা যায় না। বৃষ্টির সময় তো চোখের ভিজিবিলিটি আরও কমে আসে। ফলে সিগন্যাল ওভার স্যুটসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ভৈরবের ট্রেন দুর্ঘটনাও এই একই কারণে ঘটেছে। তখন ঢাকার টার্ন-টেবিল নষ্ট ছিল। ফলে ঢাকা থেকে ইঞ্জিনগুলোকে উল্টো যেতে হতো।

লোকোমাস্টারদের এই প্রতিনিধি বলেন, ঢাকায় যে লোকোমাস্টারদের রানিং রুম রয়েছে, সেখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আমাদের লোকোমাস্টারদের মাঝেমধ্যে কোমর পর্যন্ত পানি ভেঙে সেই রানিং রুমে যেতে হয়।

টার্ন-টেবিল সম্পর্কে জানতে ঢাকা বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) জহিরুল ইসলামের মোবাইলে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি। 

তবে ওই বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, ‘ওটা তো এতদিন ট্রায়াল চলে আসছিল। বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে। এটার পানি সরানো হচ্ছে। আরও একদিন সময় লাগবে পানি সরাতে। পানি সরানোর পর টার্ন-টেবিল ব্রিজের বিয়ারিং চেক করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক করতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে।’

ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টার্ন-টেবিলের পানি নিষ্কাশনের সমস্যা ছিল। কালকের মধ্যে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। এটি নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাই ঝুঁকি না নিয়ে তিন দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামীকাল চালু হয়ে যাবে।’

একটি কোচকে নির্দিষ্ট সময় পরপর টার্ন টেবিলের ওপর রেখে ঘোরানো হয়। এতে বাঁ দিকের চাকা ডান দিকে এবং ডান দিকের চাকা বাঁ দিকে চলে যায়। ফলে দুই পাশের চাকা সমানভাবে ক্ষয় হয়। এতে চাকার স্থায়িত্ব বাড়ে। অন্যদিকে চালক যদি ইঞ্জিনের পেছনে বসেন, তাহলে রেললাইনের সংকেত (সিগন্যাল) দেখতে অসুবিধা হয়। এতে ট্রেনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে

রেলওয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বাস শোনার পর লোকোমাস্টারদের প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান বলেন, তারা এখনও পানি সরাতে পারেননি কেন? একটা টার্ন-টেবিলের মধ্যে ২-৩ দিন পর্যন্ত কেন পানি থাকবে? যদি ইঞ্জিন না ঘুরিয়ে চালাতে হয়, তাহলে তো ট্রেনের স্পিড কমে যাচ্ছে। কারণ আমরা তো ঠিকভাবে সামনে দেখতে পারি না। লং হুডে যখন ট্রেন চলে, তখন স্বাভাবিকের তুলনায় একটু গতি কম থাকে।

তিনি আরও বলেন, লোকোমাস্টারদের উপর জিআর-৬ (জেনারেল রুলস নম্বর ৬) এ একটি আইন রয়েছে। এই আইনের ফলে লোকোমাস্টারদের ঘাড়ে ২০ শতাংশ দোষ এমনি চলে আসে। সিগন্যাল দেওয়া থাকলেও যদি সেটি মেনে কেউ দুর্ঘটনায় পড়ে, তাহলে এই আইনের আওতায় বলা হয়, আপনি কেন দেখে ট্রেন চালালেন না?

টার্ন-টেবিল কেন জরুরি

একটি কোচকে নির্দিষ্ট সময় পরপর টার্ন টেবিলের ওপর রেখে ঘোরানো হয়। এতে বাঁ দিকের চাকা ডান দিকে এবং ডান দিকের চাকা বাঁ দিকে চলে যায়। ফলে দুই পাশের চাকা সমানভাবে ক্ষয় হয়। এতে চাকার স্থায়িত্ব বাড়ে। অন্যদিকে চালক যদি ইঞ্জিনের পেছনে বসেন, তাহলে রেললাইনের সংকেত (সিগন্যাল) দেখতে অসুবিধা হয়। এতে ট্রেনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। তাই দিন-রাতের হিসেব করে গন্তব্য বা প্রারম্ভিক স্টেশনে ইঞ্জিন টার্ন-টেবিলের ব্রিজের উপর এনে ঘুরানো হয়।

এমএইচএন/এসকেডি