দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পোশাক পরে পণ্যবাহী গাড়িকে থামার সংকেত দিত একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর গাড়ির চালক ও হেলপারের হাত-পা বেঁধে রেখে গাড়িসহ করা হতো পণ্য ডাকাতি।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি ডিমের গাড়ি ডাকাতির ঘটনায় চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন– আসলামুল হক আসলাম ওরফে বেলাল (৩৭), রমজান শেখ ওরফে কালু (৪০), মেহেদী শেখ হিরা (৩৩), জমির খান (৩৬) ও মো. জহিরুল ইসলাম চকিদার (৫০)।

একইভাবে সাভারের চান্দিনায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ডাকাতির ঘটনায় অপর এক অভিযানে ডাকাত দলের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর দলটির সদস্যরা হলেন– জাহাঙ্গীর আলম (৪২), মো. মিরন ওরফে সুজন (৫০), মো. মেহেদী হাসান রাজীব (৩০), আব্দুল মতিন (৪২), বাদল মুন্সী (৪৫) ও সাগর ইসলাম (২৪)।

তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি গাড়ি, পুলিশের ওয়্যারলেস, জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, মহাসড়কে ডিবি পুলিশের পোশাক পরে লেজার লাইট দিয়ে সংকেত দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করে আসছিল তারা। এ চক্রটি ধারাবাহিকভাবে মূল্যবান যেকোনো পণ্যবাহী গাড়ি দেখলেই সংকেত দিত। সম্প্রতি রূপগঞ্জে ডিমবাহী গাড়ি থামিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ চক্রটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করত। পাশাপাশি ডাকাতি করে নেওয়া গাড়ি দিয়ে তারা আবার ডাকাতি করত।

হারুন অর রশীদ বলেন, সাভারের চান্দিনায় এক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ডাকাতির শিকার হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব মামলা তদন্ত করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা শনাক্ত করা হয়েছে। সেসব ঘটনায় এই দুই ডাকাত দলের সদস্যরা জড়িত।

ভুক্তভোগীদের দায়ের করা মামলা থেকে জানা যায়, এই ডাকাত দলের সদস্যরা প্রতিদিনই মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতি করত। তারা প্রথমে পুলিশে সেজে গাড়িকে থামার সংকেত দিত। এরপর পুলিশ পরিচয়ে গাড়ির কাগজ ও মালামাল সম্পর্কে জানতে চাইত। এসময়ের মধ্যে ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা চালক ও তার সহকারীর হাত-পা বেঁধে নিজেদের অন্য গাড়িতে তুলি নিত। পরে তারা পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য বিক্রি করে সটকে পড়ত।

ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা বলতে চাই দেশের কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটলে অবশ্যই মামলা করবেন। কারণ মামলা হলে তখন এসব চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করতে পারবে। গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্যের বিরুদ্ধে পাঁচ থেকে ১২টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। তারা পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য।

অভিযান সংশ্লিষ্ট মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যরা নিজেদের আড়াল করতে অত্যন্ত কৌশলী। তারা নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত।

জেইউ/এসএসএইচ