স্কুলে পাঠ্যবইয়ের কল্যাণে পানিপথের যুদ্ধের সাথে কমবেশি পরিচয় রয়েছে বেশিরভাগ মানুষের। ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের পানিপথ নামক স্থানে তিন দফায় সংঘটিত যুদ্ধগুলো পানিপথের যুদ্ধ নামে পরিচিত। 

আজ সকালের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকাতেও হয়ে গেল অন্যরকম এক যুদ্ধ। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো ডুবে যাওয়ার পর ছুটির দিন সকালে বাইরে বের হওয়া মানুষগুলোকে যেন পানিপথ পার করতে হয়েছে। ডুবে যাওয়া রাস্তা পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো এক রকম যুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। 

ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানীর শাহবাগ, গ্রিনরোড, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, পান্থপথ, উত্তরা, বনানী, জাহাঙ্গীর গেট, মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড, শান্তিনগর, বিজয়নগর, বসুন্ধরা, বিজয় সরণি, বাংলা মোটর, ধানমন্ডি, আফতাবনগর, বাড্ডা, আজিমপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।  

এসব সড়কে গাড়িগুলোকে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিয়ে চলতে দেখা গেছে। ফেসবুক গ্রুপ ট্রাফিক অ্যালার্টে অনেকেই পরমর্শ দিয়েছেন বাইরে বের না হতে; বিশেষ করে প্রাইভেট কার নিয়ে যারা বের হচ্ছেন তাদের জন্য এভাবে বলা হয়েছে। 

টানা বৃষ্টিতে ঢাকার সড়কে এতটাই পানি জমেছে যে পরিস্থিতি অনেকে এভাবে বর্ণনা করছেন— ঢাকার সড়কে নৌকা চলার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।   

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মুশফিকুর রহমান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি টোলারবাগের বাসা থেকে বের হন বারিধারার উদ্দেশে। তিনি জানান, ইঞ্জিনে পানি উঠে গিয়ে রাস্তায় অসংখ্য প্রাইভেট কার ও সিএনজি বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জলাবদ্ধতার সঙ্গে এতে করে যানজটও সৃষ্টি হয়েছে।   

টোলারবাগ থেকে বারিধারায় গন্তব্যে আসতে তার দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে এই যানজটের কারণে। 

সোহেল নামে একজন উবারচালক জানান, তিনি সকালে আফতাবনগরের যে অবস্থা দেখেছেন তাতে সারা দিনে তিনি আর এ পথে আসবেন না।   

নিউমার্কেটের নিচতলার বেশ কিছু দোকানে পানি উঠে গেছে বলে জানা গেছে। 

আজিমপুর এলাকায় রিকশার ওপরে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক যাত্রীকে সিটের ওপরের অংশে বসে যেতে দেখা গেছে। 

ইস্কাটন এলাকায় একজন সিএনজি চালক বলেন, আধাঘণ্টা বৃষ্টি হলেই কোথাও যাওয়ার উপায় থাকে না। অবস্থা খুব খারাপ। বলার মতো কিছু নেই। আমার গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রথম যাত্রী নিয়েছে তাতেই এই অবস্থা। এখন দেখি কী করা যায়। 

 

বিপাকে পরীক্ষার্থীরা 
ছুটির দিন হওয়ায় আজ সকালে বাইরে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা অন্যদিনের চেয়ে কম। তবে সকালে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা থাকায় এতে অংশগ্রহণকারীদের বিপাকে পড়তে হয়। বৃষ্টির সঙ্গে যানবাহনের স্বল্পতায় পড়তে হয় অনেককে।  সকাল ৯টা থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে অনেকেই যথাসময়ে বাসা থেকে বের হতে পারেননি। 

আবার এই সুযোগে সিএনজি-রিকশাচালকরা ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হয়েছে তাদের।  

রাজধানীর তিতুমীর কলেজ কেন্দ্রে নিবন্ধন পরীক্ষার সিট পড়েছে তানজিয়া শারমিন ইভার। বৃষ্টির মধ্যে ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হন তিনি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি, এতো বৃষ্টিতে বের হওয়ার কোনো উপায় দেখছিলাম না। অবশেষে বৃষ্টির মধ্যেই বের হতে হয়েছে। বাসা থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত কোনো রিকশা নেই, তাই হাঁটু পানি ডিঙিয়ে হেঁটে আসতে হয়েছে। 

দেশের সব বিভাগেই আজ বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা জানিয়েছে, সারা দেশে আজ বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। মেঘলা থাকতে পারে সারা দেশের আকাশ। ফলে সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে আসতে পারে। আগামীকাল শনিবার থেকে বৃষ্টি আবার কমে আসতে পারে।

এনএফ