ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সহযোগিতায় যৌথ অভিযানে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মোবাইল সিম ও ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) সরঞ্জামাদিসহ এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বুধবার (১০ জুলাই) এনটিএমসি ও র‌্যাব-১ যৌথভাবে রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী মো. রাজুকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে।

র‍্যাব বলছে, রাজু প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতেন। দেশের বাইরে থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে এনে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতেন। বিদেশ থেকে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মিনিট কল বাংলাদেশে আসতো। যেটার রাজস্ব হারাতো সরকার।

গ্রেপ্তার রাজু লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জের ইউনুস আলী ভূইয়ার ছেলে। তিনি রাজধানীর মধ্য বাড্ডার হাজী সলিমুদ্দিন লেনের একটি বাসায় বসবাস করে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন।

অভিযানকালে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০টি ভিওআইপি সিম বক্স, পাঁচ হাজার ৫০টি সিম, দুইটি পাওয়ার ক্যাবল, একটি রাউটার, একটি মাউস, ছয়টি পেনড্রাইভ, ছয়টি মোবাইল ফোন, পাঁচটি ল্যাপটপ, একটি অনু, পাঁচটি ইন্টার সুইচ বক্স, একটি কি-বোর্ড এবং একটি ফ্লেক্সিলোড সিম বক্স ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদি।

র‌্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (অপস ও মিডিয়া অফিসার) এএসপি মো. মাহফুজুর রহমান জানান, বিভিন্ন সময়ে কিছু অসাধু চক্র অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। বিদেশ থেকে টেলিফোন কল আসা ও যাওয়ার পরিমাণ বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

এনটিএমসির সহযোগিতায় র‌্যাব জানতে পারে যে, কতিপয় ব্যক্তি ঢাকার বাড্ডা এলাকায় অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদি স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে টেলিযোগাযোগের ব্যবসা করে আসছেন। অবৈধ এ সব যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। ইতঃপূর্বে র‌্যাব ফোর্সেস এসব অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রায় ৬০০ অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। 

এছাড়া, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব অবৈধ ব্যবসা বন্ধের লক্ষ্যে এনটিএমসি ও বিটিআরসির সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাড্ডা থেকে এই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার রাজু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি প্রচলিত সফটওয়্যার ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল রাউট করতেন এবং অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যান্ত্রিক, ভার্চুয়াল এবং সফটওয়্যার ভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধভাবে দেশের অভ্যন্তরে সার্ভার স্থাপন করে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও কলিং কার্ড, পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা দিতেন। তিনি ও তার চক্রের ব্যবহৃত সিস্টেমে বিদেশ থেকে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মিনিট কল বাংলাদেশে আসতো। যার মাধ্যমে গ্রেপ্তার রাজু প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতেন। 

এছাড়া, দেশের বাইরে থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে এনে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতেন বলেও প্রাথমিকভাবে জানান। 

গ্রেপ্তার রাজু অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এছাড়া, দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পেমেন্টে (ইন্টারনেট ও সিম) ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে রাজু আরও জানান, তিনি ২০১০ সালে দুবাই থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে দেশে এসে কম সময়ে বেশি মুনাফা লাভের আশায় জনৈক সবুজের সহায়তায় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা শুরু করেন। রাজু পলাতক সবুজের সহায়তায় ভিওআইপি সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে, দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকার বাড্ডা থানাধীন জনৈক গোলাম মোস্তফার মালিকানাধীন ভাড়া বাসায় ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজুর পল্টন থানাধীন শান্তিনগর মোড় ব্রাক ব্যাংক শাখায় নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় যে, গ্রেপ্তার রাজু ও পলাতক আসামিরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চক্রের সক্রিয় সদস্য। যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যাতিত অবৈধ ভিওআইপি যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা তৈরি করতেন এবং অবৈধভাবে টেলিযোগাযোগ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। 

সফটওয়্যার ভিত্তিক সুইচের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল রাউট করতেন এবং অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যান্ত্রিক, ভার্চুয়াল এবং সফটওয়্যারভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা দিতেন। 

তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পলাতকদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

জেইউ/কেএ