সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এই অবরোধের ফলে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যান চলাচল। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পুরো নিউ মার্কেট এলাকা।

অবরোধের ফলে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ীরা। চার দিন ধরে চলা অবরোধের ফলে ক্রেতার পরিমাণ পৌঁছেছে শূন্যের কোঠায়। মাসের শুরুর দিকে এমন হোঁচট খেয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা।

বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সবসময়ের কোলাহলপূর্ণ এই মার্কেটের সর্বত্র সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। লোকসমাগম নেই বললেই চলে। অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। সায়েন্সল্যাব মোড়ের বায়তুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট থেকে শুরু করে এই এলাকার গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারসহ সবগুলো মার্কেটই এখন ক্রেতাশূন্য।

আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আজ চার দিন ধরে এমন অবস্থা। আমাদের দৈনিক দোকানের খরচও উঠছে না। অনেক দোকানে সারা দিনে এক টাকার পণ্যও বিক্রি হয়নি। আমরা কীভাবে কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ দোকানের খরচ উঠাব। এখন আন্দোলন যদি থেমেও যায় তাও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই দিন লাগবে। অর্থাৎ এই মাস জুড়েই আমাদের বড় ক্ষতি টানতে হবে। একদিন বিক্রি কম হলেই পুরো মাসে প্রভাব পড়ে। সেখানে আজ চার দিন ধরে বেচাকেনা নেই।

নূরজাহান মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী মোবারক করিম বলেন, সারাদিন একটা শাড়িও বিক্রি হয়নি। ক্রেতাই নাই, কাপড় বিক্রি করব কার কাছে? গতকাল মঙ্গলবার ছিল মার্কেটের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তার আগে দুই দিন ছিল আন্দোলন। সব মিলিয়ে এখন চারদিন ধরে কোনো বিক্রি নেই। সারাদিন দোকান খোলা রাখার ফলে যে বিদ্যুৎ বিল হয় সেটার টাকাও উঠছে না। আমরা পড়েছি বড় বিপাকে। কার কাছে গেলে এর সমাধান হবে জানি না। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে অনুরোধ, দ্রুত এই অবস্থার অবসান ঘটান। না হলে ব্যবসায়ীদের না খেয়ে মরতে হবে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। সংসদে আইন পাস করে কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।

সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবরোধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা কলেজ শাখার সমন্বয়ক নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, আন্দোলন থামাতে আপিল বিভাগ আজ স্থিতাবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাদের ফাঁদে পা দিতে চাই না। সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি। সেটি হচ্ছে আইন পাস করে কোটা বাতিল করতে হবে। এটি ছাড়া অন্য কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। দাবি আদায় হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

এর আগে আজ সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ।  

আরএইচটি/এসকেডি