দুই ইস্যুতে উত্তপ্ত দেশের শিক্ষাঙ্গণ। একদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা, অন্যদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ দুই ইস্যুতে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

আজ (বুধবার) কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকার প্রধান প্রধান সব পয়েন্টে ব্লকেড করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেললাইন অবরোধ করার ঘোষণাও দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া, ঢাকার অন্তত ১৭টি স্থানে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এতে করে রাজধানীজুড়ে দিনব্যাপী ব্যাপক যানজটের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

একই দিনে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কটূক্তির প্রতিবাদে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, প্রজন্ম ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই মুখোমুখি বা একই স্থানে আরেক কর্মসূচি ডাকা নিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে— আজকে রাস্তায় বের হওয়া সম্ভব হবে কি না? গাড়ির চাকা আদৌ ঘুরবে কি না?

গুলশানের একটি ব্যাংকে চাকরি করেন মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আন্দোলনের গত কয়েকদিনে অফিস থেকে ফিরতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার যানজটে ভুগতে হয়েছে। আজ সেই ভয়ে মানুষ সবাই যেন আগেভাগেই রাস্তায় বের হয়েছে। তাই যানজটের শুরু তো সকাল থেকেই। জানি না বিকেলে কীভাবে ফিরব।

প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকার নিম্ন আদালতে যাবেন মিরপুরের ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সেদিন কোর্ট থেকে ফিরতে গিয়ে ভুগেছি। আর আজকে তো দিনভর আন্দোলন চলবে। কীভাবে যাব আর কীভাবে ফিরব এত দূরত্বের পথ? ডর লাগতেছে। আজকে নাকি আবার সারা ঢাকাতেই আন্দোলন।’

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলন করতে চাইলে করবে। তাদের কর্মসূচি যদি শান্তিপূর্ণ হয় তাহলে শঙ্কার কিছু নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে ভিন্ন কিছু ঘটলে পুলিশ আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

মূলত কোটাবিরোধী আন্দোলনের নতুন ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ।

শিক্ষার্থীদের বর্তমান এক দফা দাবি হলো- সব গ্রেডে সর্বপ্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। এই দাবি আদায়ে সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ অনুযায়ী আজ সারা দিন দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরোধ করা হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশাপাশি হাইওয়ে এবং রেলপথও এই ব্লকেডের আওতায় থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বায়ক নাহিদ ইসলাম এসব ঘোষণা দেন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ব্লকেড কর্মসূচি চলবে।

ঘোষণা অনুযায়ী ব্লকেডের স্পটসমূহ

ঢাকার ভেতরে শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, ফার্মগেট, চানখারপুল মোড়, চানখারপুল ফ্লাইওভারে ওঠার মোড়, বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্বর, মৎস্য ভবন, জিপিও, গুলিস্তান, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত, রামপুরা ব্রিজ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, মহাখালী, বাংলামোটর ও আগারগাঁও।

এ ছাড়া, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর ও বড় জেলা শহর এবং বড় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে। এ অবস্থায় ঢাকাসহ সারা দেশে জনভোগান্তি এবং শাহবাগে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত কর্মসূচির স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক ও সজাগ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। আগ বাড়িয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া কোনো ধরনের অ্যাকশনে বা বিতণ্ডায় জড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।

রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) মোহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চেষ্টা করবো কোনো কিছু যেন না ঘটে। শাহবাগে কোটা আন্দোলনের বাইরে আরও একটি সংগঠনের মুভমেন্ট আছে। উভয়পক্ষ যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করেন। আমাদের প্রস্তুতি আছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো ধরনের বেআইনি কার্যক্রম যেন সংঘটিত না হয়, সেই ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ঢাকার সব স্থানে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। আমরা এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক কোনো ইন্ধন দেখছি না। তবে কেউ যদি কোনো রকমের বেআইনি কার্যক্রম বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করেন তাহলে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেইউ/এমজে