বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধিসহ ঢাকার বাসার মালিকদের বিরুদ্ধে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হয়রানির অভিযোগ ভাড়াটিয়াদের। বাসা পরিবর্তনের ঝক্কি ঝামেলার কারণে মুখ বুজে সহ্য করে যান ভাড়াটিয়ারা। তবে এবার রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পোস্তা এলাকায় উল্টো ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

কয়েক মাস ধরে ভাড়া না দেওয়া, অসামাজিক কার্যকলাপ ও হুমকি-ধামকির অভিযোগ তুলে বাসা ছেড়ে দিতে বলার কারণে ধর্ষণ মামলা ঠুকে দিয়েছেন ভাড়াটিয়া। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দুমাস ধরে জেল খাটছেন খোদ বাসার মালিক।

ভুক্তভোগী ভবন মালিকের নাম মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। তিনি পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পোস্তা এলাকার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের আব্দুস সালামের ছেলে।

ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকবাজার থানার পোস্তার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৭৬/২ নম্বর বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। সাত তলা ভবনের ছয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় বসবাসের চুক্তি করেন জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি নামের এক নারী। দুই বছর বসবাসের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন করে আবারও চুক্তি করেন। তিনি বাড়ির মালিকের সঙ্গে ১২ হাজার টাকা ভাড়ার একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। নতুন চুক্তির পর প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা করে প্রথম সাত মাস ভাড়া পরিশোধ করেন। পরবর্তী সাত মাসে কখনো ১০ হাজার কখনো ১১ হাজার ভাড়া পরিশোধ করেন। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন। ভাড়া না পেয়ে একাধিকবার বাড়ির মালিক নাজমুল হাসান সজিব ভাড়া পরিশোধ ও বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেন।

পাওনা টাকা পরিশোধ করে বাসা ছাড়ার জন্য দুই মাস সময় চান ভাড়াটিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস। এই সময় পেরিয়ে গেলে বাসা না ছেড়ে উল্টো বাড়ির মালিককে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। সর্বশেষ নাজমুল হাসান সজিবের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা দেন এ্যানি। সেই মামলায় কারাগারে থাকা সজিবের পরিবারের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আপস করতেও চাপ দিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।

ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে ভবন মালিক সজিবের মা আসগড়ি বেগম বলেন, নিয়মিত ভাড়া না দেওয়া, হুমকি-ধামকি, অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে চুক্তি অনুযায়ী আমরা তাকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ করেছি। এখন সে উল্টো আমার ছেলের নামে মিথ্যা শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা করেছে। এমনকি এই ধর্ষণ মামলায় আমার ছেলের দুই বউ ও বাসার নিরাপত্তাকর্মীকেও আসামি করেছে। এই মামলায় কীভাবে পুলিশ নিলো! বোঝে আসছে না।

আসগড়ি বেগমে দাবি, আমার ছেলে পেশায় ব্যবসায়ী। তার দুই স্ত্রী। তারা এক সঙ্গে একই বাসায় আমার কাছে থাকে। দুই বউকে নিয়ে আমরা অত্যন্ত সুখী পরিবার। আসল সমস্যা হলো আমার ছেলের কোনো সন্তান নেই। তিনি (বাদী) ভেবেছেন ওই ভবন দখল করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাতিয়ে নেবেন। এখন তিনি আপোসের নামে ২০ লাখ টাকা দাবি করছে। আমার বাসায় এসেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

জেলে থাকা সজিবের দুই স্ত্রীর একজন শায়লা। তিনি মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেখেন কি হাস্যকর ব্যাপার, প্রথমে ভাড়াটিয়া হিসেবে বাসায় উঠছে। কতদিন ভালোভাবে চলছে। এরপর আস্তে আস্তে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করছে। এরপর মামলা করছে। এখন আবার আমার স্বামী নাকি আমাদের বিয়ের কথা গোপন করে তারে বিয়ে করে বাসায় এনে ভরণপোষণ দিয়েছে। অথচ তার সঙ্গে যে আমাদের ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র আছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। 

শুধু তাই নয়, ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র, ভাড়ার রশিদ ও পুলিশের দেওয়া ভাড়াটিয়া তথ্য ফরমেরও এর প্রমাণ আছে। সেসব অস্বীকার করে তিনি নতুন করে একটা জিডি করেছে।

শায়লা বলেন, মূলত আমার স্বামী নিঃসন্তান। সেটি বুঝতে পেরে পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে মামলায়। লক্ষ্য বাড়ি দখল। তিনি যখন জেনেছেন ভবনের মালিক শাশুড়ি ও আমরা দুই স্ত্রী তখন থেকে আপসের কথাবার্তা বলছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমনকি ওই মহিলা কারাগারে গিয়েও আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাড়াটিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসায় ওঠার পর থেকে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, বিষয়টি এমন না। মাঝে আমার সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। সেজন্য ভাড়া দিতে পারিনি। পরবর্তীতে আমি ঠিকই ভাড়া দিয়েছি। তারা আমাকে মানসিক নির্যাতন করেছে। আমাকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের চেষ্টা করেছে। আমার বাসার গ্যাস বিদ্যুৎসহ সব ধরনের সার্ভিস বন্ধ করেছে। আমার তিন সন্তানের একটা এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তবুও তারা সেবা লাইনের কানেকশন দেয়নি। 

তিনি বলেন, আমি মামলা করার পর তারা আমাকে আপসনামায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়েছে। আমি তাদের কাউকে হুমকি দেইনি। তারাই অনবরত চাপে রেখেছে, নির্যাতন করছে। আমি মামলা করেছি। আইনি লড়াইয়ে আমি যদি দোষী হই শাস্তি মেনে নেব, দোষী তারা হলেও তাদের শাস্তি হবে।

জানতে চাইলে ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের উপপরিদর্শক (এসআই) খোদেজা খানম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মামলা অনুযায়ী ধর্ষণ হয়েছে কি না সেটা পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ করেছি। ফরেন্সিক করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট এখনো আসেনি। মামলার তদন্ত চলমান। রিপোর্ট পাওয়ার পর সবকিছু বোঝা যাবে।

জেইউ/এমজে