দেশের অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাংলাদেশের বিকৃত ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে। এসব স্কুলে ভুল বা বিকৃত ইতিহাস পড়ানো ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ।

সভায় তৃতীয় বৈঠকের কার্যবিবরণী তুলে ধরা হয়। তৃতীয় বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিষয়ে আলোচনার তথ্য জানা গেছে।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি / ঢাকা পোস্ট

ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশে ইংরেজি মাধ্যমের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের বিকৃত ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ স্কুলগুলোতে জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে রচিত পাঠ্যপুস্তক পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।

পাশাপাশি অন্য কোনো বই যেন না পড়াতে পারে সেজন্য সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি সুপারিশ করার জন্য কমিটির সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মন্ত্রী।

বৈঠকে এর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, পাঠ্যপুস্তকে ভুল এবং ঠিকাদারদের অনিয়মসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা ও সুপারিশ করেন সদস্যরা। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ঢাকা-৮ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজকে জাতীয়করণের জন্য গত বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করায় প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা নেই।

এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজকে জাতীয়করণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ক্যাডার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তাকে সেখানে প্রেষণে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়নের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক / সংগৃহীত

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন একটি কার্যকর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে।

প্রাথমিক স্তরে বিনামূল্যে বিতরণ করা পাঠ্যপুস্তকের কিছু কপি কমিটিতে তুলে ধরে তিনি বলেন, বইগুলোর ছাপা ও কাগজের মান খুবই নিম্নমানের। বই মুদ্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত এনসিটিবির বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণ কার্যক্রম সম্পর্কে উত্থাপিত অভিযোগগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।

ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সচিবকে পরামর্শ দেন তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সফলতা রয়েছে। একই সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনমনে অনেক প্রশ্নও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে বহুবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। সঠিকভাবে প্রকল্প গ্রহণ এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মানসম্মতভাবে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার ওপর সরকারের সফলতা নির্ভর করে। যে সকল ঠিকাদার কাজ নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে পারেননি বা মানসম্মতভাবে কাজ করছেন না তাদের সবাইকে কালো তালিকাভুক্ত করে কার্যাদেশ বাতিল করতে হবে।

একই সঙ্গে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সমাপ্ত করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরুল ইসলাম নাহিদ / ফাইল ছবি

স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কাজ করার আর্থিক সক্ষমতা না থাকার পরেও শুধু সরকারি অর্থ দিয়ে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে অনেক ঠিকাদার কাজ নিয়ে থাকেন। যার ফলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত না করে তারা ফেলে রাখেন। এমনকি কার্যাদেশ নেওয়ার পর আংশিক কাজ করে অধিক বিল নিয়ে ঠিকাদার সেই কাজ আর করতে আসেন না। ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসহ উন্নয়ন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল, জরিমানা ও কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যা ও অনিয়ম প্রসঙ্গে সভাপতি বলেন, সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যা ও অনিয়ম নিয়ে কমিটি বরাবর বেশকিছু আবেদন এসেছে। আবেদনগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই কমিটির কাছে আসা আবেদনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিবকে দায়িত্ব দেন তিনি।

এসআর/এমজে