#বর্তমানে ‘উপায়’এ কর্মরত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা
#তার অনুরোধেই অধিদফতরকে চাপ দিচ্ছে মন্ত্রণালয়, অন্তর্ভুক্তির প্রবল বিরোধিতায় সমাজসেবা অধিদফতর
#যথেষ্ট এজেন্ট/সামর্থ্য নেই, দাবি সমাজসেবা অধিদফতরের
#টাকা উত্তোলনে সমস্যায় পড়বে ভাতাভোগীরা, চুক্তির ব্যত্যয় বলছে আর্থিক সংস্থা বিকাশ ও নগদ

সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণে মোবাইল আর্থিক সংস্থা ‘উপায়’কে যুক্ত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভাতা বিতরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ট এজেন্ট ও সামর্থ্য নেই বলে মনে করছে অধিদফতর। তবুও ভাতা বিতরণ কার্যক্রমে নগদ ও বিকাশের সঙ্গে উপায়কে যুক্ত করতে চায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা।

জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের সারা দেশের সাড়ে তিন লাখের বেশি এজেন্ট আছে। আর নগদেরও এজেন্ট সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। সেখানে উপায়ের সারা দেশে এজেন্ট সংখ্যা কয়েক হাজার মাত্র। অথচ এই উপায়কেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণে যুক্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

তবে, মন্ত্রণালয়ের এই চেষ্টার প্রবল বিরোধিতা করছে সমাজসেবা অধিদফতর। উপায়ের যথেষ্ট পরিমাণে এজেন্ট না থাকায় ভাতাভোগীরা টাকা উত্তোলনে বিড়ম্বনায় পড়বেন এমন আশঙ্কা করছে সমাজসেবা অধিদফতর। তারা এই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।

বর্তমান ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিকাশ ও নগদের বিতরণ এলাকা হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে এলাকার দায়িত্বে থাকে, সেখানে পুরো ভাতাই সেই প্রতিষ্ঠান এককভাবে বিতরণ করে। ফলে এ অবস্থায় উপায়কে কোনো এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হলে সেখানে ভাতাভোগীরা টাকা উত্তোলনে সমস্যায় পড়বেন বলে অধিদফতর মনে করছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতর বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ করে থাকে। ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে শীর্ষ দুটি এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দুটি সংস্থাকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থা দুটি সাফল্যের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে এই দায়িত্বে উপায়কেও সংযুক্ত করার জন্য অধিদফতরকে বলা হয়।

জানা গেছে যে, বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনির একজন সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সম্প্রতি আর্থিক সংস্থা উপায়ে যোগ দিয়েছেন। তার ইচ্ছায় ভাতা বিতরণের এই কাজটি উপায়কে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের এই অনুরোধের পর গত বছরই সমাজসেবা অধিদফতর উপায়ের নানা সুযোগ সুবিধা বিশ্লেষণ করে দেখে। তাদের অনুসন্ধানে অধিদফতর জানতে পারে যে, বাজারে নতুন আসা উপায়ের দেশে পর্যাপ্ত এজেন্টই নেই। ফলে তাদের যে এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেখানে ভাতাভোগীরা ভাতা উত্তোলনে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়বেন।

উপায়ের ক্যাশ আউট চার্জ সামান্য কম। কিন্তু তাতে ভাতাভোগী পর্যায়ে কোনও পার্থক্য তৈরি হবে না। কারণ, ভাতার সঙ্গে ক্যাশ আউট চার্জ সরকার ও এমএফএস প্রতিষ্ঠান মিলে ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে দেয়। ফলে ভাতাভোগীকে কোনো অপারেটরের জন্যই ক্যাশআউট চার্জ খরচ করতে হয় না।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়কে লেখা অফিশিয়াল চিঠিতে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল লিখেছেন, ‘উপায়’র সাধারণ ক্যাশ আউট চার্জ ‘বিকাশ’ ও ‘নগদ’ এর চেয়ে কিছুটা কম হলেও তা সামাজিক নিরাপত্তার আওতাধীন উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ ছাড়া দেশব্যাপী ‘উপায়’র এজেন্ট পয়েন্ট সংখ্যা অপর্যাপ্ত।

চলতি অর্থবছরে আরও নয় লাখ সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাভোগী যুক্ত হচ্ছে। এই অজুহাতে উপায়কে যুক্ত করার জন্য বলছে মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের পাশাপাশি বর্তমানে দায়িত্বে থাকা দুই মোবাইল ব্যাংকিং সংস্থাও ভাতা বিতরণে আপত্তি তুলেছে। এই দুটি সংস্থার একটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদানের জন্য সমাজসেবা অধিদফতরের সঙ্গে আমাদের কয়েক বছরের চুক্তি আছে। সে চুক্তি এখনও শেষ হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নতুন ভাতাভোগী যুক্ত হলেও বর্তমান দুটি এমএফএসই দায়িত্ব পাওয়ার কথা।

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় এর মধ্যে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে চাচ্ছে। যা আমাদের দৃষ্টিতে চুক্তির ব্যত্যয়।

এ বিষয়ে উপায় কর্তৃপক্ষ বলেন, ইউসিবি ফিনটেক কোম্পানি লিমিটেড (উপায়) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির একটি শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। ‘উপায়’ ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও, এ প্লাটফর্ম খুব অল্প সময়ে গ্রাহক ও এজেন্টদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয় এবং বর্তমানে সারা দেশব্যাপী উপায়ের এক লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি এজেন্ট রয়েছে, যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

‘উপায় গ্রাহকদের সর্বনিম্ন চার্জে এমএফএস সেবা প্রদান করে থাকে। পাশাপাশি, সরকারি উপকারভোগীরা সারা দেশে বিস্তৃত ইউসিবি এটিএম বুথের মাধ্যমেও বিনা খরচে ভাতার টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, উপায় দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে উপকারভোগীদের অর্থ বিতরণের কাজ সুনামের সাথে করে আসছে। এ বিষয়ে কখনও কোনো উপকারভোগী কোনো অভিযোগ করেননি, যা উপায়-এর এমএফএস সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান ও নিরাপত্তার স্বাক্ষর বহন করে। এছাড়া, উপায় যাত্রার শুরু থেকেই এ খাতে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে, ফলে সাধারণ গ্রাহকগণ কম খরচে উন্নত এমএফএস সেবা পাচ্ছেন।’ 

এএইচআর/পিএইচ