সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে ব্যস্ততম নগরীতে। যার জেরে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো রাজধানী। 

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ, শেরাটন, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া, কাটাবন, সাইন্সল্যাব ও নীলক্ষেত এলাকায় অবস্থান নিতেও দেখা যায়।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও ফেস্টুনসহ আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন সড়কের সিগন্যাল ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। যার কারণে সড়কে আটকা পড়েছে শত-শত গাড়ি। এসব এলাকার রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে রওয়ানা হন। তবে অ্যাম্বুলেন্স, রোগীবাহী গাড়ি ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে আন্দোলনকারীরা।

শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চালকরা। এ ছাড়া রিকশা ও সিএনজি চালকের আটকে রাখতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেল আটকাতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে আশপাশের সব রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আলামিন নামে এক পথচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারওয়ান বাজার যাচ্ছিলাম। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। ওইদিক দিয়ে আবার শাহবাগ মোড়ও ব্লক। বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার গাড়িও পাচ্ছি না।

আরেক পথচারী সুমন বলেন, ঢাকার যানজটে এমনিতেই আমরা অতিষ্ঠ। এর মধ্যে আবার সড়ক অবরোধ করে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। সরকারকে বলব অতি দ্রুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। 

জায়েদা বেগম নামে এক নারী বলেন, অফিস থেকে বের হয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস পেলাম না। বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওয়ানা হচ্ছি।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী খালিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোটা প্রথা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের কারণে রাস্তায় কিছু গাড়ি আটকা পড়েছে। কিন্তু আমরা অ্যাম্বুলেন্সসহ রোগীবাহী গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি। তবে, আজকে যারা আন্দোলনের কারণে কিছুটা অসুবিধায় পড়েছে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। 

আন্দোলন ফলে এই কোটা পদ্ধতি বাতিল হলে সবাই তার সুফল ভোগ করবে বলেও যোগ করেন তিনি।

এর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। পরে ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করলে গত ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা ব্যবস্থা।  

গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

শিক্ষার্থীদের একদফা দাবি হলো

সব গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।

এএইচআর/এমজে