গাড়ি বন্ধ করে সড়কে অলস সময় পার করছেন সিএনজি চালকেরা / ঢাকা পোস্ট

কোটাবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের দুই নম্বর গেইট এলাকায় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুই নম্বর গেইট থেকে মেডিকেল, মুরাদপুর, বায়েজিদ সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ের চার সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। এতে শত-শত যাত্রী গাড়ি আটকা পড়েছে। অনেকে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে।

৬০ বছর বয়সী সুবির নাথ আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাট যাচ্ছিলেন বাসে করে। দুই নম্বর গেইটে এসে তিনি আটকা পড়েছেন। বাসের অন্য যাত্রীরা হেঁটে গন্তব্যের দিকে ছুটলেও সুবির বসে আছেন আন্দোলন শেষ হওয়ার আশায়। কারণে তিনি হেঁটে যেতে পারবেন না।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বৃদ্ধ মানুষ। সবাই হেঁটে চলে গেছে। গাড়ি ছাড়া তো আমি যেতে পারব না। দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি।’

সিএনজিচালক মোহাম্মদ আবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি। আজকে রথযাত্রার জন্য সকাল থেকেই ভাড়া কম। এখন আন্দোলনের কারণে এখানে দুই ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। আমাদের কী পেট নাই? আমরা কাউরে মানাইতে পারব, কোম্পানি না পেট?’

শাহেদ নামে আরেক সিএনজি চালক বলেন, ‘যারা আন্দোলন করতেছে তাদের ভাবা উচিত, আমাদের শ্রমিকদের বেতন কে দেবে? আমাদেরও তো অধিকার আছে রাস্তায় গাড়ি চালানোর। দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি।’

রোববার (৭ জুলাই) দুপুর থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে দুই নম্বর গেইট এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। এতে ব্যস্ততম সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে ষোলশহর এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল করে দুই নম্বর গেইট মোড় এলাকার ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে তারা। এর ফলে আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল পাঁচটা ৫০ মিনিট) আন্দোলনকারীরা দুই নম্বর গেইট এলাকায় অবরোধ করে রাখে।

চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী সাইদ আনোয়ার জিহাদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিলো সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটার ফলে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেধা থাকার পরও যোগ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মূলত আমরা বৈষম্যমূলক কোটা প্রত্যাহার করার জন্য এই আন্দোলন করে যাচ্ছি।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

এর আগে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে একই এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে সড়কে অবস্থান নেয় তারা। ফলে দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। 

প্রসঙ্গত, কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে গত পাঁচদিন ধরে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দুদিন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলন করলেও নগরে এর প্রভাব ছিল না। কিন্তু শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আন্দোলন করছে নগরীর দুই নম্বর গেইট ও ষোলশহর এলাকায়। এ আন্দোলনে তারা চার দফা দাবি জানিয়ে আসছে। 

দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে;  ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে;  সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরএমএন/এমজে