শাহবাগ মোড়ের চারদিক থেকে আসা চারটি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করছেন কোটা বিরোধী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। এ আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।

রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। তবে শাহবাগ মোড়ের উপর দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

শুরুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন। এরপর একে একে শাহবাগ মোড়ের চারটি রাস্তা বন্ধ করে দেন। 

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আজ বিকেল ৩টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল। যদিও নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পরে তারা অবস্থান নেন।  

এদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় বন্ধ করে রাখায় শাহবাগের আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এমনকি মোড় বন্ধ করে দেওয়ার আগে যেসব গাড়ি শাহবাগের আশপাশে অবস্থান করছিল সেগুলোও আটকা পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

আন্দোলনে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে যাব। পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা আজ শাহবাগে জড়ো হয়েছি। পরবর্তী কর্মসূচি যা দেওয়া হবে, আমরা সে অনুযায়ী তা পালন করব।

এর আগে শনিবার (৬ জুলাই) কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়েছিলেন, রোববার বিকেল ৩টায় সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।

এমএইচএন/এএসএস/এসকেডি