সংরক্ষিত সব মাঠ, পার্ক, উদ্যান এবং খেলার মাঠে বিনা ফিতে সর্বসাধারণের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। শনিবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমনের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সরকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান হিসাবে পরিচিত ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক ও ময়মনসিংহ মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশ মূল্য এক লাফে ৫ গুণ বৃদ্ধি করেছে (২০ থেকে ১০০ টাকা)। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা-১ কর্তৃক জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন ধ্বংসাত্মক, জনবিরোধী ও নিন্দনীয়৷

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বসাধারণের ব্যবহার উপযোগী নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) সীমিত। সেখানে বিভিন্ন লেক, পার্ক, উদ্যান কিংবা খেলার মাঠ ক্রমশ সাধারণের প্রবেশ বিভিন্ন উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে নানাভাবে মারাত্মক নেতিবাচক সমাজে পড়ছে৷ বিশেষ করে, নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও অবারিত শারীরিক এবং মানসিক স্বস্তির স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ায় সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

শিশু-কিশোরসহ সকল প্রকার সাধারণ মানুষ একাকী হয়ে পড়ছে৷ যা জনসাধারণের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ৷ এসব কারণে মোবাইল আসক্তি, নেশাগ্রস্ত হওয়া, মুটিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে৷ সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিনোদনের অভাবে শিশু-কিশোররা ‘কিশোর গ্যাং’ এর মতো ধ্বংসাত্মক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে৷

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সবধরনের উদ্যান ও উন্মুক্ত জনসমাগমস্থলে (পাবলিক প্লেস) জনপ্রবেশ অধিকার যত সংকুচিত হবে দেশে হাসপাতাল ও কারাগারের সংখ্যা তত বাড়বে৷ যেখানে ঢাকাসহ দেশের মানুষকে গাছ ও উদ্যান, পার্কমুখী করা প্রয়োজন, শরীর চর্চা ও বিনোদনের সুযোগ অবারিত রাখা প্রয়োজন, সেখানে প্রবেশ ফি আরোপ ও বৃদ্ধির মতো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও গবেষক, সাধারণ মানুষ ও দরিদ্র জনগণকে উদ্যানবিমুখ করে তুলবে৷ বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসাবে নাগরিকের যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করবে৷

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে কিশোর-তরুণদের মোবাইলসহ যন্ত্রের প্রতি আসক্ত ও একাকীত্বে ভোগার প্রবণতা বাড়তে পারে উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, তাদের যদি গাছের গুরুত্ব বোঝানো যায়, প্রকৃতি-জীববৈচিত্র-পরিবেশের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়, খেলাধুলা ও সুস্থ ধারা বিনোদনের প্রতি আগ্রহী করা যায় তাহলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ইতিবাচক এবং সামাজিক হয়ে উঠবে৷ কিশোর গ্যাংয়ের মতো ধ্বংসাত্মক কাজে যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে৷ প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং খেলাধুলার প্রতি শিশু-কিশোরদের আগ্রহী করে তোলা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷

আরএইচটি/এসকেডি