পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, কোনো বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়েছে সড়ক-রেলসহ পদ্মা সেতু। পদ্মা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। বর্ষার উজান থেকে আসা ঢলের স্রোতের গতিবেগ থাকে প্রতি সেকেন্ডে ৪.৫ মিটার। পদ্মা নদীতে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টন পলি প্রবাহিত হয়। উভয় পাড়েই দেখা যায় নদী ভাঙনের তাণ্ডব। নদীর প্রেক্ষাপটে পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণ ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জের।

শুক্রবার (৫ জুলাই) পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে সেতু বিভাগ আয়োজিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় কাজ চলমান রাখা, মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভাঙনের ফলে অনেকগুলো রেল স্টেনজার ও রেলওয়ে ট্র্যাক পানিতে ডুবে যায়। সকল বাধা-বিপতি অতিক্রম করে অবশেষে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শুধু চ্যালেঞ্জ নিয়ে পদ্মা সেতুই নির্মাণ করিনি। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমরা চারটি বিশ্ব রেকর্ড অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি ৬টি মহাদেশের ২৪টি দেশের মোট ১৫০০ জন বিদেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ এবং ১৫ হাজার দেশি বিদেশি প্রকৌশলী ও কর্মীর দিনরাত কাজের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুর অ্যাপ্রচ কনসালট্যান্ট হিসেবে ও সেতু সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সহযোগিতার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। হোলি আর্টিসানে হামলা, কোভিড-১৯, ঈদ, পূজা, পার্বণ, ঝড়-ঝঞ্ঝায় পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ থাকেনি।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৫২৭ হেক্টর। ভূমি অধিগ্রহণের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য নদীর দুইপাশে ৭টি মডেল টাউন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব মডেল টাউনে বরাদ্দ কৃত ৩ হাজার ১১টি প্লটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বসবাস করছে। ১৮১১ ভূমিহীন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বিনামূল্যে প্লট প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১০০টি বাণিজ্যিক প্লট ও ১২০টি উন্মুক্ত বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে। পুনর্বাসন সাইটগুলোতে ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবং ৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। ৪টির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী ও ৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধসহ ২ লাখ ৭২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।

এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের মো. মনজুর হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি