মাদক ও অনলাইনে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে হত্যাকারীরা। এ জন্য তারা এমন ব্যক্তিকে টার্গেট করে যে ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিতে পারবে না।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে রবিউল ইসলামের অটোরিকশাটি ভাড়া করে। এরপর নরসিংদীর শিবপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় অটোরিকশা চালক রবিউলকে। সেখানে তাকে হত্যার পর অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেয় তারা।

এ ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও এক আসামি পলাতক রয়েছে বলেও জানিয়েছে পিবিআই।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, নাহিদ শেখ (২২), মো. হুমায়ুন (৪০), লিটন খান (৪৫), জুবায়ের হাসান অমি (১৯), শাজিদুল ইসলাম হাসিব (১৯), রাকিবুল (২০) ও জুয়েল (২০)। এদের মধ্যে নাহিদ, হুমায়ুন, লিটন, জুবায়ের  ও হাসিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদী জেলার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার  মো. এনায়েত হোসেন মান্নান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৯ অক্টোবর সকালে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার সাতপাইকা পাঁকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেত থেকে অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে নরসিংদী জেলার পিবিআই ও ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি নরসিংদীর পিবিআই গ্রহণ করে।

তদন্তকালে জানা যায়, ভুক্তভোগী একজন অটোরিকশা চালক। তিনি সেলফোন ব্যবহার করতেন না। ঘটনার কোনো ক্লু না থাকায় শিবপুর অঞ্চলে যাদের বিরুদ্ধে চোরাই অটো বাইক/গাড়ি  ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে তাদেরই একজন রাকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অটোরিকশাটি নাহিদের মাধ্যমে বিক্রয়ে সহায়তা করেছে স্বীকার করে। কিন্তু হত্যার বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি। তার দেওয়া তথ্য মতে, আসামি নাহিদ শেখকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি নাহিদ যে গ্যারেজে নিহত রবিউলের অটোরিকশাটি বেচাকেনা হয়েছিল সেটি শনাক্ত করে দেয়। এরপর একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে  আসামি মো. হুমায়ুনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. লিটন খাঁনের (৪৫) গ্যারেজ থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।

পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, গাড়িটি যাতে কেউ চিনতে না পারে সে জন্য গাড়ির রং ও কিছু পার্টস পরিবর্তন করে অভিযুক্তরা। পরবর্তীতে গ্যারেজ মালিক মো. লিটন খাঁন অটোরিকশাটি ৩০ হাজার টাকায় কেনেন। আসামি নাহিদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বাকি অভিযুক্তদের নাম জানান।

পিবিআই নরসিংদীর জেলা পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকারী দুজনসহ গাড়ি ক্রয় বিক্রয়, রং ও মডেল পরিবর্তন ও সংরক্ষণের সংশ্লিষ্ট মোট ৫ আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ভুক্তভোগী রবিউল হত্যাকাণ্ড ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি অমি, নিহাল, হাসিব এক সঙ্গে চলাফেরা করতেন। তারা নিয়মিত মাদক সেবন করতেন ও অনলাইনে জুয়া খেলতেন। একপর্যায়ে আসামিরা মাদক ও জুয়ার টাকা সংগ্রহের জন্য অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।

তারা সহজ সরল অটোচালক রবিউল ইসলামকে চিনত। তাই তাকেই টার্গেট করে। ঘটনার দিন বিকেল ২টার দিকে আসামি অমি, নিহাল, হাসিব শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামকে পেয়ে তার অটোরিকশা নিয়ে বিকাল ৪টার দিকে আসামি শাজিদুল ইসলাম হাসিবের বাড়ির সামনে থাকতে বলে। আসামি অমি ও নিহাল বিকেল ৪টার আগেই আসামি হাসিবের বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়।

ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম বিকাল ৪টার দিকে হাসিবের বাড়ির সামনে আসলে অভিযুক্তরা রবিউল ইসলামের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে শিবপুর থানাধীন সাতপাইকার ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আড্ডা দেয়। আড্ডা শেষে বাড়ির দিকে রওনা হওয়ার কথা বলে আসামিদের দুইজন পেছনে এবং একজন সামনের আসনে চালক রবিউল ইসলামের পাশে বসে। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, হাসিব ও নেহাল রবিউলের হাত পা জাপটে ধরে রাখে। এ সময় আসামি অমি চাপাতি দিয়ে রবিউলের গলায় কুপায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান রবিউল। এরপর আসামিরা তার মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আসামি অমির দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি উদ্ধার করা হয়। পলাতক আসামি নেহালকে ধরতে অভিযান অব্যাহত।

তিনি বলেন, সম্প্রতি চালককে হত্যার পর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এমন ঘটনা প্রতিরোধে প্রত্যেকটি অটোরিকশার ৩ দিকে গ্রিলের তৈরি গেট নির্মাণ করতে হবে। চালকের পাশে কোনো যাত্রী তোলা যাবে না। প্রয়োজনের গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের গাড়িগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে।

জেইউ/এসকেডি